মৃত্যু বলতে জীবনের সমাপ্তিকে বুঝায়। মৃত্যু হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন সকল শারীরিক কর্মকাণ্ড থেমে যায়। কোনো গবেষণা ছাড়াই যে সত্যকে মেনে নিতে হয় সেটি হলো মৃত্যু। মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর সুযোগ নেই, কোনো আশ্রয় নেই। সময় হলেই তা সামনে এসে হাজির হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো (নির্দিষ্ট সময়ে) মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, চাই তোমরা সুরক্ষিত কোনো দুর্গে থাকো না কেন।’ (সুরা নিসা: ৭৮)
মানুষ বলাবলি করে যে, একজন মানুষ বসে আছে, কথাবার্তা বলছে অথচ মুহূর্তেই সে ঢলে পড়ল, হার্ট অ্যাটাক হয়ে সে দুনিয়া থেকে চলে গেল! আসলে এটাই মৃত্যু! এমনই তার আচরণ!
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আজ কত উন্নতি সাধন করেছে। মানুষ চাঁদে পৌঁছে গেছে, কিন্তু এমন কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি যা মানুষকে বলতে পারে যে, সে কতদিন দুনিয়ায় থাকবে এবং কখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে।
আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘কোনো প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না। মৃত্যুর সময় তো লেখা আছে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৪৫)
লোভনীয় দুনিয়ার ধোকার বিপরীতে মৃত্যুর কথা ভেবে কে কে আল্লাহকে ভয় করছে, কেয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা ভেবে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলছে। সে কথারই প্রতিধ্বনী কোরআনে দেখা যায় যে—‘পৃথিবীতে যা কিছু আছে, আমি তা তার জন্য শোভা বানিয়েছি, যেন আমি পরীক্ষা করতে পারি মানুষের মধ্যে আমলে কে শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা কাহফ: ৭)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ ‘তোমরা বেশি বেশি করে স্বাদ বিনষ্টকারী বস্তুটির কথা স্মরণ কর।’ ( তিরমিজি: ২৩০৭; ইবনে মাজাহ: ৪২৫৮; নাসায়ি: ১৮২৪; মেশকাত: ১৬০৭)
মনীষীরা বলেছেন, যদি এসব প্রাণী জানত যে তাদের একদিন মরতে হবে, তাহলে তারা মৃত্যুর চিন্তায় কঙ্কাল হয়ে যেত। আর এর ফলে মানুষের রিজিকের ঘাটতি দেখা দিত। কারণ আল্লাহ তাআলা পশু-পাখির মধ্যে রেখেছেন মানুষের রিজিক। আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতি এতই মেহেরবান যে তিনি পশু-পাখির মাধ্যমে তাদের রিজিকের ব্যবস্থা রেখেছেন এবং মৃত্যুর বিষয়টি তাদের থেকে অজ্ঞাত রেখেছেন।
ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুল (স.) আমার বাহুমূলে ধরে বললেন, দুনিয়াতে এমনভাবে অবস্থান করো যেন তুমি মুসাফির বা পথিক।’ তিনি আরো বলেন, ‘যখন সন্ধ্যা হয়ে যায়, সকাল বেলার অপেক্ষা করো না। আর যখন সকাল হয়ে যায় সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। সুস্বাস্থ্যের দিনগুলোতে রোগব্যাধির প্রস্তুতি নাও। আর জীবদ্দশায় থাকাকালীন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করো।’ (সহিহ বুখাারি: ৬৪১৬)