ইসলাম কী বলে
সৌভাগ্যময় জীবন লাভের উপায়
Published
4 months agoon
সৌভাগ্য কী? এর উত্তরে কেউ মনে করেন, সম্পদ সঞ্চয় ও প্রবৃদ্ধি। আবার কেউ ভাবেন, শারীরিক সুস্থতা ও বাসস্থানের নিরাপত্তা। কারও মতে, হালাল জীবিকা ও উপকারী জ্ঞান। কেউ কেউ মনে করেন, সৌভাগ্য মানে- প্রকৃত ইমান, সৎকাজ ও এগুলোর ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা। উপরোক্ত অর্থসমূহ সৌভাগ্যের তাৎপর্যের অন্তর্ভুক্ত হতে বাধা নেই, যতক্ষণ তা শরিয়তের নিয়মনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। ইসলামি স্কলারদের মতে, সৌভাগ্য দুই প্রকার- ১. ইহকালীন সৌভাগ্য, যা সাময়িক, সংক্ষিপ্ত জীবনের সঙ্গে সীমাবদ্ধ ও পরিবর্তনশীল। ২. পরকালীন সৌভাগ্য, যা দীর্ঘস্থায়ী ও অসীম।
তবে উভয় প্রকার সৌভাগ্য একটা অপরটার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আখেরাতের সৌভাগ্যের সঙ্গে দুনিয়ার সৌভাগ্য জড়িত। আর দুনিয়া ও আখেরাতে পরিপূর্ণ সৌভাগ্যময় জীবন বলতে শুধু ওই জীবনকেই বুঝায়, যা আল্লাহ মুত্তাকি মুমিনদের জন্য মনোনীত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।’ -সুরা আন নাহল: ৯৭
পরিপূর্ণ সৌভাগ্য বলতে আপনি কী বুঝেন? কীভাবে তা অর্জন করবেন? আর পরিপূর্ণ দুর্ভাগ্য কী? কীভাবে তা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করবেন? এসব বিষয়ে আলোচনার আগে মনে রাখতে হবে, সৌভাগ্যের সবটুকুই রয়েছে আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের মধ্যে। যেমনিভাবে দুর্ভাগ্যের সবটুকু রয়েছে আল্লাহ ও তার রাসুলের অবাধ্যতার মধ্যে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে, তারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে।’ -সুরা আল আহযাব: ৭১
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলকে অমান্য করে, সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।’ -সুরা আল আহযাব: ৩৬
সৌভাগ্যময় জীবনের সঠিক পদ্ধতি প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তিই কামনা করে এবং তার ওপর ভিত্তি করেই মুসলিম সমাজ সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়। সৌভাগ্যময় জীবন লাভের অন্যতম প্রধান ও আসল উপায় হলো- ইমান ও সৎকর্ম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।’ -সুরা আন নাহল: ৯৭
যে ব্যক্তি ইমান ও সৎ আমলের সমন্বয় সাধন করতে পারবে, তার জন্য মহান আল্লাহ ইহকালে পবিত্রময় জীবনের এবং পরকালে উত্তম প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কেননা, মুমিনরা আল্লাহর প্রতি বিশুদ্ধ ইমানের ফলে সৎকাজ করে, দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য মন-মানসিকতা এবং নৈতিক চরিত্রকে সংশোধন করে। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনের কর্মকা-ে অবাক হওয়ার বিষয় হলো- তার সব কাজই মঙ্গলজনক। সে সুখ-শান্তি লাভ করলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর দুঃখ-কষ্টে পতিত হলে সে ধৈর্য ধারণ করে, ফলে তাও তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর এই সুযোগ মুমিন ছাড়া অন্য কারও ভাগ্যে জুটে না।’ -সহিহ মুসলিম : ৭৬৯২
বর্ণিত হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, মুমিনের প্রাপ্তি ও কল্যাণ দ্বিগুণ। হাসি-আনন্দ ও দুঃখ-কষ্ট সর্বাবস্থায় সে তার কর্মকাণ্ডের সুফল ভোগ করবে। এ জন্য আপনি দু’টি জিনিস পাবেন, যেগুলো কল্যাণ বা অকল্যাণের প্রতিনিধিত্ব করে। আবার উভয়ের অর্জন পদ্ধতির মধ্যে ব্যবধানও অনেক। এই ব্যবধান হবে- ইমান ও সৎকর্মের ক্ষেত্রে উভয়ের পার্থক্য অনুযায়ী। এই গুণের অধিকারী ব্যক্তি এ দুটি গুণ দ্বারা কল্যাণ ও অকল্যাণ লাভ করে। সেগুলো হলো- কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধৈর্য ধারণ। এতে তার জন্য আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি দূর হয় দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, হৃদয়ের সংকীর্ণতা ও জীবনের দুঃখ-কষ্ট এবং ইহজগতে তার জীবন হয় অর্থবহ ও সুখময়।
আর অপর ব্যক্তি অপকর্ম, দাম্ভিকতা ও স্বেচ্ছাচারিতা দ্বারা অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। ফলে তার নৈতিকতা বিনষ্ট হয় এবং অধৈর্য ও অতি লোভের কারণে তার নৈতিক চরিত্র পশুর চরিত্রের মতো গড়ে ওঠে। এছাড়া সে মানসিকভাবে অশান্ত ও অস্থির থাকে। এই অস্থিরতার পেছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে। সেগুলো হলো, প্রিয়দের হারানোর শঙ্কা, বহু দ্বন্দ্ব-সংঘাতের আশঙ্কা আর অন্তরের অস্থিরতা। ফলে সে যাই অর্জন করুক না কেন সার্বক্ষণিক তার মন আরও নতুন কিছু পেতে আগ্রহবোধ করে। এসব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, আগ্রহ, আতঙ্ক ও অসন্তুষ্টির কারণে সে দুঃখ-কষ্ট অনুভব করে।
মুমিন যখন অসুস্থতা, দারিদ্র্য কিংবা অনুরূপ কোনো মান-সম্মান বিনষ্টকারী বিপদ-মুসিবত দ্বারা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, তখন ইমান ও আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক এবং নিয়ামতের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার কারণে তার চোখেমুখে আনন্দের আভা পরিলক্ষিত হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির কাছে ইমানের দাবি অনুযায়ী আমল নেই, তাকে যখন অভাব-অনটন দ্বারা কিংবা দুনিয়ার চাওয়া-পাওয়ার কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত করার দ্বারা পরীক্ষায় ফেলা হয়, তখন তাকে আপনি দুঃখ-কষ্টে চরম বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পাবেন।
বুদ্ধিমান মানুষমাত্রই জানেন, তার জীবন সৌভাগ্যময় ও শান্তিময়; আর এটা খুবই সংক্ষিপ্ত। সুতরাং তার জন্য উচিত নয়, দুশ্চিন্তা ও পাপ-পঙ্কিলতায় জড়িয়ে জীবনকে নষ্ট করা। ফলে যখন সে দুঃখ-কষ্ট পায় অথবা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করে, তখন সে দীন ও দুনিয়ার অর্জিত অপরাপর নিয়ামত ও আক্রান্ত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে তুলনামূলক পর্যালোচনা করে। পর্যালোচনার সময় তার কাছে এ কথা পরিষ্কার হয়ে যায়, দুঃখ-কষ্টের চেয়ে নিয়ামতপ্রাপ্তির সংখ্যা অনেক বেশি।
অনুরূপভাবে সে তার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা এবং শান্তি ও নিরাপত্তার বহু সম্ভাব্যতার তুলনামূলক পর্যালোচনা করবে; তখন তার কাছে ক্ষতির আশঙ্কার চেয়ে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভের দিকগুলো প্রকাশ পাবে। এর মাধ্যমে দুশ্চিন্তা দূর হওয়ার পথগুলো উন্মুক্ত হবে। যে দুশ্চিন্তা আর কষ্টের জীবন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সে চেষ্টা-সাধনায় রত।