Connect with us

ইসলাম কী বলে

সফলতা ও বিজয়ের জন্য ঐক্যের গুরুত্ব

সফলতা ও বিজয়ের জন্য ঐক্যের গুরুত্ব

‘মুসলিম’ মানেই এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী। ইসলামি ঐক্যের মূল বিষয় হলো আল্লাহ, রাসুলুল্লাহ (সা.) ও কিতাবুল্লাহ। অর্থাৎ এক আল্লাহর প্রতি ইমান বা বিশ্বাস, আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা ও সম্পূর্ণ আনুগত্য এবং আল্লাহর কিতাব কোরআন মাজিদের পরিপূর্ণ অনুসরণ।

মহাগ্রন্থ কোরআন কারিমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে (কোরআন) সম্মিলিতভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামত স্মরণ করো। যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের অন্তরগুলোতে প্রীতি দান করেছেন। ফলে তোমরা তার অনুগ্রহে ভ্রাতৃরূপ লাভ করেছ। তোমরা তো জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তসীমানায় দাঁড়িয়ে ছিলে, তিনি তা থেকে তোমাদের রক্ষা করলেন।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩)

মুসলিম ঐক্যের প্রথম সূত্র হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বলবে, “আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই”, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বুখারি: ৪২)

মুমিনের পরিচয় সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা আমাদের নামাজ মানে, আমাদের কিবলা মানে এবং আমাদের জবাই করা হালাল জন্তু হালাল মনে করে; তারা মুসলিম। তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) জিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর জিম্মাদারির খিয়ানত কোরো না (তাদের অমুসলিম বোলো না)।’ (বুখারি: ৩৮৪-৩৮৫)

ইমানি ঐক্যের পর ফিকহি ইজতিহাদি ছোটখাটো পার্থক্য যেন বিভেদের কারণ না হয়; দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য বা মতভিন্নতা যেন বিরোধিতার কারণ না হয়; সে বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।

‘আল ইত্তিহাদ ওয়াল ইত্তিফাক মাআল ইখতিলাফ’ অর্থাৎ ‘ভিন্নমতসহ ঐকমত্য’—এই সর্বজনীন নীতি অনুসরণ করতে হবে।

ঐক্যের সুফল ও বিচ্ছিন্নতার কুফল বিষয়ে প্রিয় নবীজি (সা.)–এর বাণী, ‘সম্মিলিত ঐক্যবদ্ধ দলের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাহায্যের হাত রয়েছে, আর যারা বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন হবে, তারা জাহান্নামে যাবে।’ (তিরমিজি: ২১৬৭, সহিহ আলবানি)।

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘বিশ্বাসী মুমিনগণ সম্প্রীতি, করুণা ও দয়ার্দ্রতায় যেন একদেহ একপ্রাণ—যেমন শরীরের একটি অঙ্গে আঘাত পেলে সারা অঙ্গ ব্যথা অনুভব করে, যন্ত্রণায় নির্ঘুম রাত কাটায় ও জ্বরে ঘর্মাক্ত হয়।’ (বুখারি ও মুসলিম, মুত্তাফাক আলাইহি)

‘প্রকৃত মুসলমান সে ব্যক্তি, যার হাত ও জবান দ্বারা অন্য মুসলমান শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করে।’ (বুখারি: ৯-১০)।

মনে রাখতে হবে, ইসলাম সব সময় শান্তি, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের পক্ষে। সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আল্লাহর আনুগত্য ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর অনুসরণই একমাত্র পথ।

সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর মহান আদর্শ হলো যে ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংঘটন করবে, সে ও তৎসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার জন্য দায়ী হবে। পিতার অপরাধে পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধে পিতাকে দায়ী করা যাবে না।

এ প্রসঙ্গে কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কেউ কারও পাপের বোঝা বহন করবে না।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৬৪; সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ১৫)।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে, কোনো ব্যক্তি তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে না এবং মজলুমকে সবাই সাহায্য করবে। প্রতিবেশীকে নিজের মতোই গণ্য করতে হবে। তার কোনো ক্ষতি বা তার প্রতি কোনো অপরাধ সংঘটন করা যাবে না। কোনো জালিম বা অপরাধীকে সুরক্ষা দেওয়া যাবে না।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)। যারা ন্যায়ের পথে থাকে আল্লাহর সাহায্যে তাঁরা সুনিশ্চিতভাবে বিজয়ী হয়। মহাগ্রন্থ আল–কোরআনের বাণী, ‘আল্লাহর হুকুমে অনেক ক্ষুদ্র দল, বহু বৃহৎ দলের ওপর বিজয় লাভ করেছে; আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৪৯)।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যারা জীবন দেয়, তারা অমরত্ব লাভ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয়, তোমরা তাদের “মৃত” বোলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না।’ (সুরা-২ বাকারা: ১৫৪)।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending