Connect with us

খেলার খবর

বিশ্বকাপে ২০ দেশ

Published

on

বিশ্বকাপে ২০ দেশ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ ২০ দেশ অংশগ্রহণ করছে। সংগত কারণে আসরের ম্যাচ সংখ্যাও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের যৌথ আয়োজনের আসর হবে চার সপ্তাহের। এবারের বিশ্বকাপের মোট ম্যাচ সংখ্যা ৫৫।

এ আসরে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ দল হয়তো আপনার চেনা। সে দলগুলো কিন্তু বিশ্বকাপে এসেছে নির্দিষ্ট একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। বিশ্বকাপে দল মনোনয়ন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে ছিল আয়োজক নির্বাচন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে এ আসরের আয়োজন করছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এরই মধ্যে দুবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের উল্লাস করেছে। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে যুক্তরাস্ট্র। ২০১০ সালের আসর আয়োজন করেছিল ক্যারিবিয়ানরা। সে আসরের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। এটি হতে যাচ্ছে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আয়োজন। ২০১০ সালের মতো বার্বাডোজের ব্রিজটাউনের কেনিংস্টন ওভালে আসরের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শীর্ষ আট দল এবারের আসরে খেলার জন্য সরাসরি মনোনীত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত গেল আসরের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয় শিরোপা জয় করে ইংল্যান্ড। স্যাম কারান পাকিস্তানকে ১৩৭ রানে বেঁধে রাখার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ৬ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ইংলিশরা। সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়া ভারত ও নিউজিল্যান্ডও এবারের আসরের জন্য মনোনীত হয়। সুপার টুয়েলভ পর্বের তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা দলগুলোও এবারের আসরে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ের ভিত্তিতে যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। একাধিক অবাক করা নৈপুণ্য দিয়ে নিজেদের র‌্যাংকিংয়ের ভিত্তিতে বিশ্বকাপ খেলার অবস্থায় নিয়ে আসে বাংলাদেশ। এদিকে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ফেরিওয়ালা রশিদ খান-কায়েস আহমেদের মতো ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিশ্বকাপ খেলার মতো র‌্যাংকিংয়ে চলে আসে আফগানিস্তান।

স্বাগতিকদের দুটি, গত বিশ্বকাপের ৮ এবং র‌্যাংকিংয়ের ভিত্তিতে দুটি স্পট বাদ দিলে বাকি থাকে আরও ৮ স্পট। যা নির্ধারিত হয়েছে বিশ্বকাপ বাছাই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বাছাই পরীক্ষা দিয়ে এসেছে স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড। ইস্ট এশিয়া-প্যাসিফিক থেকে পাপুয়া নিউগিনি দারুণ নৈপুণ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইয়ে কানাডা ও বারমুডার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। নেট রানরেটের ভিত্তিকে বারমুডাকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে উঠে আসে কানাডা। এটি হতে যাচ্ছে কানাডার প্রথম বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা।
এশিয়া অঞ্চলের বাছাইয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে নেপাল ও ওমান। দলগুলো যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনকে পরাজিত করে এশিয়া অঞ্চলের বাছাইয়ের ফাইনালে উঠে আসে। ফাইনাল নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিশ্বকাপের টিকিট চূড়ান্ত হয়েছে। ফাইনাল ম্যাচ টাই হওয়ার পর সুপার ওভার জিতে এশিয়া অঞ্চলের বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ওমান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করা শেষ দল ছিল উগান্ডা। আফ্রিকা অঞ্চলের বাছাইয়ে আঞ্চলিক পরাশক্তি জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে দেয় দেশটি। এটি হতে যাচ্ছে উগান্ডার প্রথম বিশ্বকাপ আসর। আফ্রিকা অঞ্চল থেকে নামিবিয়াও বিশ্বকাপে উঠে এসেছে। দেশটি ২০২১ ও ২০২২ সালের আসরেও খেলেছে।

ক্যাঙ্গারুরা অলটাইম ফেভারিট : অস্ট্রেলিয়া বরাবরই বড় রেসের ঘোড়া, মেগা আসরের ফেভারিট। অজিরা এবারের বিশ্বকাপও শুরু করবে ফেভারিট তকমা নিয়েই। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ১২ সংস্করণে সাতবার ফাইনাল ও আটবার সেমিফাইনাল খেলার পরিসংখ্যানই দলটির হয়ে কথা বলছে। সর্বোচ্চ ছয়বার শিরোপা জিতেছে ক্রিকেটের কুলীন দেশটি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা একবার চ্যাম্পিয়ন। একবারের রানার্সআপ। ট্রাভিস হেড এখন অজি একাদশের অপরিহার্য সদস্যে পরিণত হয়েছেন। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তার ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকবে অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকরা।

এবারও আন্ডারডগ আফগানরা : আফগান ক্রিকেটের উত্থানের গল্পটা যেন রূপকথার চেয়েও রোমাঞ্চকর। এত দ্রুততম সময়ে এমন অবিশ্বাস্য উন্নতি ক্রিকেটের ইতিহাসে শুধু বিরল নয়, একমাত্র ঘটনা। ভাবলে অবাক হতে হয়, এই অবিশ্বাস্য উন্নতির পেছনে সেই অর্থে রাষ্ট্রীয় কোনো প্রণোদনা নেই, যেটা পেয়ে থাকেন আর দশটা দেশের ক্রিকেটাররা। অভাব-অভিযোগ আর দেশের ক্রিকেটের নানা অব্যবস্থাপনার পরও রশিদ-মুজিবরা আজ বিশ্ব ক্রিকেটের সুপারস্টার।

চ্যালেঞ্জ রোহিতদের : একটা সময় ছিল, যখন বলতে গেলে অস্ট্রেলিয়ার কোনো প্রতিপক্ষ ছিল না। রিকি পন্টিংদের সেই যুগে অজিদের কাছে নাকানি-চুবানি খাবে অন্যান্য দল—সেটাই ছিল নিয়ম। ভারতীয় দলটি বর্তমানে অনেকটা সে রকমই। মাঠে নেমে জয়সওয়াল, কোহলি, রোহিত, সূর্যকুমাররা প্রতিপক্ষ বোলারদের তুলাধুনা করবেন, এই দৃশ্য স্বাভাবিক। সঙ্গে আছে জাসপ্রিত বুমরাহর মতো বোলার। গত এক দশকে সব সংস্করণ মিলিয়ে চারবার ফাইনাল খেলেও তারা শিরোপা জিততে পারেনি।

পাকিস্তান নিয়ে কিছুই বলা যায় না : প্রতিভার ঘাটতি নেই, প্রয়োজন সঠিক সময়ে জ্বলে ওঠার। বড় মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার মতো একঝাঁক তারকা আছেন দলটিতে। বোলিং যেমন ক্ষুরধার, ব্যাটিংও বেশ গভীর। দলের ধারাবাহিক পারফরমার বাবর আজম; যিনি অধিনায়কও। বাবর আজম ছাড়া ফখর জামান ও মোহাম্মদ রিজওয়ানও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিস্ফোরক ইনিংস খেলে প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে ইফতিখার আহমেদেরও।

ইংল্যান্ড : মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে ইংল্যান্ড জিতেছে সীমিত ওভারের দুটি বিশ্বকাপ। ইংলিশদের ‘বাজবল’ টেস্ট ক্রিকেটের মেজাজটাকেই পাল্টে দিয়েছে। তবে সেই বাজবলের সবচেয়ে বড় দুই বিজ্ঞাপন—টেস্ট অধিনায়ক বেন স্টোকস ও কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম জুটি নেই ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে। ইংল্যান্ডকে লর্ডসে ২০১৯ বিশ্বকাপ ও মেলবোর্নে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন স্টোকস। দুই ফাইনালেই করেছিলেন ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ফিফটি। এমন এক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের অভাব নিশ্চয়ই টের পাচ্ছেন বাটলাররাও। তবে ইংল্যান্ডের স্বস্তি হলো, দলে তারুণ্য ও তারকার অভাব না থাকা।

এবার হবে তো কিউইদের স্বপ্ন পূরণ : দুবাইয়েও ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল নিউজিল্যান্ড। সেই ব্যর্থতাকে এক পাশে সরিয়ে আরেকটি বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করছে তারা। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেশ সহজ গ্রুপেই আছে কিউইরা। দুর্ঘটনার শিকার না হলে সুপার এইটে রাখায় যায় তাদের। এমনকি সেমিফাইনালেও। ক্রিকেটের পোড় খাওয়া দলটি নিশ্চয়ই সেখানে থামতে চাইবে না।

চিরন্তন ‘চোকার’ দক্ষিণ আফ্রিকা : ‘চোকার’ শব্দটি দক্ষিণ আফ্রিকার পিঠে আঠার মতো লেগে গেছে। বিশ্বকাপের বড় ম্যাচে দলটা হারবে—এটাই শতসিদ্ধ নিয়ম। বর্ণবাদ মুক্তির পর ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে র্যাঙ্কিংয়ে একাধিকবার শীর্ষে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে সফল দলের একটি। এই সংস্করণে প্রোটিয়াদের জয়ের হার ৬০ শতাংশের বেশি। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত নকআউট ট্রফি জিতেছিল। পরে যেটির নামকরণ হয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৮টি বিশ্বকাপের মধ্যে চারটি সেমিফাইনাল খেলেছে প্রোটিয়ারা। টি২০ বিশ্বকাপ খেলেছে আরও ছয়টি।

সোনালি অতীত ফেরাতে চায় লঙ্কা : ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জেতার পর থেকেই শ্রীলঙ্কা অন্যরকম দল। ২০১৪ সালে মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ভারতকে হারিয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল লঙ্কানরা। ২০০৭ ও ২০১১—টানা দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেও শিরোপা জেতা হয়নি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ফাইনাল খেলেছে তিনবার—২০০৯, ২০১২ ও ২০১৪। এরপর থেকে যেন পেছনের দিকেই হেঁটেছে লঙ্কানরা। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পরের ছয় বিশ্বকাপে তাদের সাফল্য বলতে শেষ আট (২০১৫)। তবে সেই খারাপ সময় থেকে কিছুটা হলেও বেরিয়ে আশার আলো দেখাচ্ছেন পাথুম নিশাঙ্কা-কুশল মেন্ডিসের মতো ব্যাটাররা।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending