খেলার খবর
বাফুফের অবহেলায় কৃষ্ণার অভিমান
Published
5 months agoon
চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের জন্য গত বুধবার দল ঘোষনা করা হয়েছে জাতীয় নারী ফুটবল দলের। কিন্তু সেই দলে নেই স্ট্রাইকার কৃষ্ণা রানী সরকার। দীর্ঘদিন চোটে ভুগার কারণেই সম্প্রতি সেভাবে ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়ায় জায়গা হয়নি তার। তবে চোট নিয়ে প্রায় দুই বছর ধরে ভুগতে থাকা এই ফুটবলার সামাজিক রাগ, ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ফুটবল ফেডারেশনের ওপর।
বাফুফের অবহেলার কারণেই উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেননি বলে দাবি করেছেন এই ফুটবলার।
২০২২ সালের সাফের পর থেকেই পায়ের পাতায় পাওয়া ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছেন কৃষ্ণা। দেশেই চিকিৎসক দেখিয়েছেন নিয়মিত। তাকে ভারত কিংবা অস্ট্রেলিয়া নিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন দেশের চিকিৎসকরা।
কিন্তু এ নিয়ে কারো কোনো সাহায্য পাননি কৃষ্ণা। বিশেষ করে ফুটবল ফেডারেশনের কেউ তাকে দেশের বাইরে পাঠাতে এগিয়ে আসেনি। দেশের বাইরে চিকিৎসা এদেশের তুলনায় কিছুটা হলেও ব্যয়বহুল। যেকারণেই এই ফুটবলার বাফুফের সহযোগিতা চেয়েছিলেন।
কিন্তু ভ্রূক্ষেপ নেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তাদের এমন দাবি কৃষ্ণার। এই ফুটবলার নিজ উদ্যোগেও দেশের বাইরে যেতে পারেননি।
ইনজুরি নিয়েই সবশেষ নারী ফুটবল লিগে নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির হয়ে খেলেছেন কৃষ্ণা। চার ম্যাচ খেলে করেছেন তিন গোল। পুরোপুরি সেরে না ওঠাতেই লিগে তাকে খেলানোর ঝুঁকি নেয়নি দলটির কোচিং স্টাফ।
কৃষ্ণার মতো একই চোটে পড়েছিলেন পুরুষ জাতীয় দলের ফুটবলার শেখ মোরসালিন। কিন্তু ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করার পাশাপাশি তার ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের ফিজিওর অধীনে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালিয়ে চার মাসের মধ্যে মাঠে ফিরেছেন এই মিডফিল্ডার। কিন্তু প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চোট কাটিয়ে উঠতে পারেননি কৃষ্ণা।
বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে তার দেওয়া পোস্ট কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:
”২০২২ এ সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে ইঞ্জুরিতে পরি। প্রায়ই দেড় বছর হয়ে গেছে। পা আগে থেকে ভালো কিন্ত এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়ে উঠতে পারিনি। প্র্যাকটিস করলেই ব্যথা হয়। বাফুফের ফিজিও দিয়ে আমার ট্রিটমেন্ট চলছে। সবাই জানে ইনজুরিটা অনেক রেয়ার। ব্যথা নিয়েই প্র্যাকটিস করতেছি। দেশে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফিজিও দেবাশীষ চৌধুরী স্যারকে দেখিয়েছিলাম। উনি আমাকে অনেকদিন দেখেন, যখন ব্যথা কমতে ছিল না। স্যার বলেছিলেন অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া গিয়ে ট্রিটমেন্ট করাতে। কিন্তু যখন আমি বাফুফে জানাই, উনারা বলেন আরো কিছুদিন দেশে ডাক্তার দেখাতে। আমি অনেকদিন তাদেরকে ইন্ডিয়াতে যাওয়ার কথা বলছি। কিন্তু উনারা আমার কথায় কোন গুরুত্ব দেয়নি। আজও পর্যন্ত ব্যাথা নিয়ে প্র্যাকটিস করছি।”
”২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব ১৪ দলে সুযোগ পাই এবং ২০১৪ সালে সিনিয়র জাতীয় দলে সুযোগ পাই, সেখান থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কখনো কোনো দলের বাইরে থাকতে হয়নি। প্রায় ১০ বছর একটানা জাতীয় দলের হয়ে খেলেছি। টুকটাক ইনজুরিতে পড়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে এত বড় ইনজুরিতে পড়বো কখনো ভাবিনি। অনেকদিন রেস্টে থাকার পর আর ভালো লাগছিল না এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিলাম। তাই ব্যথা নিয়ে প্রাক্টিস চালিয়ে যাচ্ছি।”
”চায়নাতে যখন এশিয়ান গেমস খেলতে যাই, তিনটা ম্যাচ বেঞ্চে বসে কাটিয়েছে। ব্যাক টু ব্যাক দুইটা টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে গেলাম। একজন প্লেয়ার হিসেবে এইটা মেনে নেওয়া খুব দুঃখজনক। কষ্ট একটাই কখনো কোন টিমমেট, প্লেয়ার বা কোচকে বলতে দেখলাম না কৃষ্ণা ইনজুরি তাকে তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট করানো হোক। কারো কোন মাথা ব্যথাই নেই।
১০ বছরের পরিশ্রম এক নিমিষে শেষ। অনেক প্লেয়ারকে দেখেছি এভাবে হারিয়ে যেতে। মনে হয় সেই দিনটা আর বেশি দিন নেই কৃষ্ণার জন্য। সবাই আমার জন্য আশীর্বাদ এবং দোয়া করবেন। যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পরি। আবার আগের মতো মাঠে ফিরতে পারি। [বিঃদ্রঃ মনের কিছু কথা শেয়ার করলাম। কারো কোন খারাপ লাগে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]””