সাবেকদের জন্য এ নতুন কিছু নয়। কিংবদন্তিদের জন্য তো না–ই। খেলা ছাড়ার পর বিভিন্ন প্রীতি ম্যাচে অংশ নেন তাঁরা। সেটা শুধুই খেলার প্রতি ভালোবাসা কিংবা সমর্থকদের কথা ভেবে নয়। বেশ দুই পয়সা আয়ও হয় তাঁদের। রোনালদিনিও যার মোক্ষম উদাহরণ। ৭ বছর আগে খেলা ছেড়ে দেওয়া এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি স্রেফ প্রীতি ম্যাচ খেলেই যা আয় করেন, তা ইউরোপে খেলা চালিয়ে যাওয়া অনেকের চেয়ে বেশি।
রোনালদিনিও তাঁর ক্যারিয়ারে সোনালি সময়ে (২০০৬) বছরে ২ কোটি ৩০ লাখ ইউরো আয় করতেন। ফরাসি সাময়িকী ফ্রান্স ফুটবল তখন জানিয়েছিল, ফুটবলারদের মধ্যে আয়ে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তিই শীর্ষে। ২০১৮ সালে তাঁর অবসরের পর শুধু স্পনসর কিংবা অন্য এনডোর্সমেন্ট থেকে আয় করেছেন। পাশাপাশি সাবেকদের বিভিন্ন প্রীতি ম্যাচে অংশ নিয়েও মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছেন ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী। গত নভেম্বরেই যেমন ফ্রান্সের অঁজিতে কিংবদন্তি ও সাবেক ফুটবলারদের প্রীতি ম্যাচে অংশ নেন রোনালদিনিও। সেই ম্যাচে অংশ নিয়ে বার্সেলোনা ও ব্রাজিল কিংবদন্তি কি পরিমাণ অর্থ আয় করেছেন, তা জানিয়েছে ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘লা পারিসিয়ান’।
ব্রাজিল ও ফ্রান্সের সাবেক ফুটবলাররা অংশ নিয়েছিলেন রেমন্ড কোপা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে। ৫–৪ গোলে জিতেছিল রোনালদিনিওর দল। লিঁও এবং মোনাকোর হয়ে লিগ আঁ এবং বার্সেলোনার হয়ে লা লিগাজয়ী ব্রাজিলের সাবেক স্ট্রাইকার সনি অ্যান্ডারসন খেলেন রোনালদিনিওর দলে। ব্রাজিলের হয়ে কোপা আমেরিকাজয়ী সাবেক মিডফিল্ডার ভালদোও ছিলেন। ফরাসি শিবিরে ক্লদ ম্যাকলেলে ও সেনেগালিজ মামাদু নিয়াং খেলেন। তবে সবাইকে ছাপিয়ে ২০০৫ ব্যালন ডি’অরজয়ী রোনালদিনিওই ছিলেন দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
ফরাসি প্রতিষ্ঠান জোগো দস ফামোসো (গেম অব দ্য স্টারস) এই প্রীতি ম্যাচের আয়োজক। ম্যাচে বিজ্ঞাপনের জন্য স্পন্সররা এই প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার ইউরো পর্যন্তও দিয়েছে। ফরাসি সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, রোনালদিনিও এই ম্যাচে অংশ নেওয়ার জন্য ২ লাখ ২০ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা) পেয়েছেন আয়োজকদের কাছ থেকে। দুই দলের বাকিরা পেয়েছেন ২ হাজার থেকে ১৫ হাজার ইউরো। লা পারিসিয়ান জানিয়েছে, বাকিদের তুলনায় রোনালদিনিওর বিশাল অঙ্কের অর্থ আয়ের কারণ শুধু তাঁর অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তাই নয়, বিশ্বের সেরা সব স্পনসর প্রতিষ্ঠানেরও দৃষ্টি কাড়তে পারেন। অঁজির প্রীতি ম্যাচে যেমন ইতালির বিখ্যাত স্পোর্টস কার ও বিলাসবহুল গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বরগিনিও স্পনসর ছিল। এ ছাড়া ব্রাজিল ও চীনের বড় বড় প্রতিষ্ঠান তো ছিলই।
গত আগস্টেও পর্তুগালের সাবেক খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলেছেন রোনালদিনিও। লা পারিসিয়ান সূত্রের মারফত জানিয়েছে, নতুন বছরে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোয় এবং ক্যামেরুনে প্রীতি ম্যাচ খেলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন ৪৪ বছর বয়সী সাবেক এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। ভাই রবার্তো আসিস তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। এসব প্রীতি ম্যাচে পারিশ্রমিক নিয়ে দর–কষাকষির বিষয়টি আসিসই সামলান। এই দর–কষাকষি শুরু হয় ম্যাচপ্রতি ৩ লাখ ইউরোয়।
আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে প্রীতি ম্যাচ খেলে আয়ের এই মডেলটি রোনালদিনিওর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮ সালে একবার প্রায় দেউলিয়াই হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অবসর নিলেও বিশ্বব্যাপী তাঁর অনুসারী সংখ্যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায় ১৫ কোটি। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যদূত হিসেবে তাই তাঁকে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানেরই পছন্দ। গত নভেম্বরে রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক খেলোয়াড়দের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে তাঁকে ডেকেছিল বার্সা। সে ম্যাচে ফ্রি কিক থেকে দারুণ এক গোল করে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিলেন ৪৪ বছর বয়সী এই সাবেক ফুটবলার।
গত নভেম্বরে আজারবাইজানের বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক কপ২৯ সম্মেলনে অংশ নিতে প্রাইভেট জেট বিমানে গিয়েছিলেন রোনালদিনিও। তবে বিতর্কও আছে। ২০২০ সালে প্যারাগুয়েতে ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে ঢুকতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ১৬ লাখ ডলারে জামিন পান। কিন্তু সেসব বিতর্ক পেছনে ফেলে রোনালদিনিও এখনো অনেকটা আগের মতোই জনপ্রিয়, সেটা হোক ইউরোপ, আফ্রিকা কিংবা এশিয়ার কোনো দেশ। প্রীতি ম্যাচে তাঁর উপস্থিতি মানে যে গ্যালারি ভর্তি।