মিশিগানের খবর
মিশিগানে দুই দিনে ঈদ পালন নিয়ে বিতর্ক
Published
3 months agoon
যথাযোগ্য মর্যাদায় যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে রবি ও সোমবার, ১৬ ও ১৭জুন দুইদিনে উদযাপিত হয়েছে মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। যে দিনের সঙ্গে মিশে আছে মুসলমানদের উৎসব ও আনন্দ। সেই দিনটিকে নিয়ে তেমনই রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। ঈদ কিংবা রোজা এলেই যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। রমজানকে নিয়ে যে বিতর্ক ছিল তা এবার দ্বিগুণভাবে ফিরে এসেছে দুই ভিন্ন দিনে ঈদুল আজহা পালনকে কেন্দ্র করে। অতীতেও ভিন্ন দিনে ঈদ পালনের ঘটনা রয়েছে মিশিগানে।
রোববার ১৬ই জুন মিশিগানের বিভিন্ন মসজিদ ও খোলা মাঠে একাধিক ঈদ জামাতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন। তাছাড়া পরের দিন সোমবার মসজিদুন নূর ও বায়তুল মোকাররমসহ কয়েকটি মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই ভিন্ন দিনে ঈদ উদযাপন করায় কমিউনিটিজুড়ে বিতর্ক দেখা দেয়। একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভিন্ন দিনে ঈদ জামাত আদায় করতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় আলেমদের নিয়ে কঠোর সমালোচনা করছেন বাংলাদেশি আমেরিকানরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের অধিকাংশ মসজিদে রবিবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। স্থানীয় একাধিক আলেমদের সাথে কথা বললে তাঁরা সাধারণ মুসল্লিদের এ নিয়ে তর্কে না জড়িয়ে নিজ ইমামকে অনুসরণ করার অনুরোধ করেন। রবিবার ঈদ পালনের যুক্তি দেখিয়ে আল ফালাহ মসজিদের ইমাম আব্দুল লতিফ আজম জানান, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নর্থ আমেরিকাতে প্রথমার চাঁদ দেখা যায় না। ইয়েমেন থেকে মরক্কো পর্যন্ত প্রথমার চাঁদ খুবই স্পষ্ট থাকে, তাই এই অঞ্চলের মুসলিম যেকোনো রাষ্ট্রে চাঁদ দেখা গেলে আমরাও তাদের সাথে স্থানীয় সময় মিলিয়ে ঈদ পালন করতে পারি। তাছাড়া ঈদুল আজহা হজের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় তারিখ নির্ধারণ আরও সহজ বলে জানান তিনি।
মিশিগানে এখন পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে প্রথমার চাঁদ কেউ দেখেনি বলে তিনি দাবি করেন। তাছাড়া এসব নিয়ে কাউকে বিতর্কে না জড়িয়ে নিজ ইমামকে অনুসরণ করার অনুরোধ জানান এই আলেম।
এদিকে সোমবার ঈদ পালনের পক্ষে মত দেন মসজিদুন নূরের ইমাম ও খতীব মাওলানা আবু সিদ্দিক। তিনি জানান, শত শত আলেমদের নিয়ে পুরো নর্থ আমেরিকাব্যাপী আমাদের হিলাল কমিটি আছে। আমরা স্থানীয়ভাবে প্রতিমাসে চাঁদ দেখার চেষ্টা করি। এবারের ঈদের চাঁদও আমরা প্রত্যেকটি রাজ্যে স্থানীয়ভাবে দেখার চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোথাও চাঁদ দেখা না যাওয়ায় হিলাল কমিটি সোমবার ঈদ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
তাছাড়া মিশিগানের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আব্দুস সালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।
এ নিয়ে আল মিসবাহ ইন্সটিটিউটের প্রিন্সিপাল মুহাম্মাদ ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের মাযহাব মতো গ্লোবাল মুন সাইটিং ফলো করি তাই পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় চাঁদ দেখা গেলে স্থানীয় সময় অনুযায়ী রোজা ও ঈদ পালন করে থাকি। তাছাড়া এই ঈদের সাথে হজ্বের আনুষ্ঠানিকতার মিল আছে, সেই মিল রেখেই আমরা রবিবার ঈদ পালন করেছি।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র শাফী মাযহাব স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখায় বিশ্বাসী, তবে শাফী মাযহাবের অনেক ইয়েমেনি আলেমরা অমুসলিম দেশে মুসলিমদের সামাজিক শৃঙ্খলা ও ইসলামের সৌন্দর্য্যের জন্য শরীয়াহ মতে আমাদের সাথে ঈদ পালন করে থাকেন।
এদিকে রোববার মিশিগানে বাংলাদেশি কমিউনিটির ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত ডেট্রয়েট সিটির জেইন ফিল্ডে বায়তুল মামুর মসজিদের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ওয়ারেন সিটির স্কুল মাঠে ইসলামিক সেন্টার অফ ওয়ারেনের আয়োজনে ঈদের আরেকটি বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া মিশিগানের মুসলিম অধ্যুষিত সিটি ডিয়ারবন, হ্যামট্রামেক, ডেট্রয়েট, ওয়ারেন, স্টার্লিং হাইটস, ট্রয়, এন আরবারসহ বিভিন্ন সিটিতে ঈদ উদযাপিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে হ্যামট্রামেক সিটি ছাড়া অন্যান্য শহরে উন্মুক্ত স্থানে পশু জবাইয়ের নিয়ম না থাকায় প্রতি বছরের মত বিভিন্ন ফার্ম কিংবা গ্রোসারির মাধ্যমে পশু কোরবানি দিয়েছেন বাংলাদেশিরা। তবে হ্যামট্রামেক সিটির ইয়েমেনী কয়েকটি পরিবারকে বাসার আঙিনায় পশু কোরবানি দিতে দেখা গেছে।
ঈদ উদযাপন নিয়ে বাঙালি কমিউনিটিতে পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনা ও যুক্তিতর্কে জড়াচ্ছেন অনেকেই। তবে স্থানীয় আলেমরা মনে করেন নিজ ইমামকে মেনে নিয়ে তর্কে না জড়ানোর। আর কমিউনিটির সকলের প্রত্যাশা স্থানীয় আলেমরা এক হয়ে এমন বিতর্কের যেন সমাপ্তি টানেন।