নিউইয়র্ক
আমেরিকাকে পুরো বদলে দেবে রক্ষণশীলদের প্রজেক্ট ২০২৫
Published
1 month agoon
প্রজেক্ট টোয়েন্টি টোয়েন্টি ফাইভ। আমেরিকায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে এই প্রজেক্ট ২০২৫ নিয়েই। আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ডনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের পর কামালা হ্যারিসের জনপ্রিয়তা যেমন আলোচনায়, তেমনি আলোচনায় এই প্রজেক্ট ২০২৫। ঠিকভাবে বলতে গেলে অন্য সব আলোচনাকে ছাপিয়ে এটিই এখন পাদপ্রদীপের আলোয়। কিন্তু কেন? কী এই প্রজেক্ট ২০২৫। এ নিয়ে এত হল্লাই বা কেন?
সোজা কথায় প্রজেক্ট ২০২৫ হচ্ছে রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের একটি প্রকল্প, যা আসন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হলে ক্ষমতার পালাবদল ও পরবর্তী রিপাবলিকান সরকারের করণীয় সম্পর্কিত একটি দিকনির্দেশনা। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই প্রজেক্ট ২০২৫ রিপাবলিকান
থিংক ট্যাঙ্কগুলোর একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম।
এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে প্রজেক্ট ২০২৫ ডট ওআরজি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনের উদারবাদী রাজনীতিকদের নানা কর্মকাণ্ডই এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে। বিশেষত বামপন্থীরা এই দেশের ক্ষতিসাধনে যেসব কর্মকাণ্ড করেছে, তা বাতিল করে সামগ্রিকভাবে আমেরিকানদের জন্য একটি ভালো দেশ গঠনের উদ্দেশ্যেই এই প্রকল্প।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে, আসন্ন নির্বাচনে রক্ষণশীলেরা জয় পেলেই তো বিষয়টির সমাধান হয়। তাহলে আলাদা করে কেন এই প্রকল্প? এর উত্তরে প্রকল্পটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উদারবাদীরা আমেরিকার এতটাই ক্ষতি করে ফেলেছে যে, আগামী নির্বাচনে শুধু জয় পাওয়াই আর রক্ষণশীলদের জন্য যথেষ্ট নয়। উগ্র বামপন্থীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে একই সঙ্গে শাসন সম্পর্কিত লক্ষ্য নির্ধারণ, সঠিক জায়গায় সঠিক লোক বসানো এবং পরবর্তী রক্ষণশীল প্রশাসনকে প্রথম দিন থেকেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে ২০২৫ প্রেসিডেন্সিয়াল ট্রানজিশন প্রজেক্ট বা সংক্ষেপে প্রজেক্ট ২০২৫ চারটি সুনির্দিষ্ট ভিতের কথা বলেছে। এগুলো হচ্ছে—নীতি সম্পর্কিত লক্ষ্য, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, প্রশিক্ষণ ও নতুন প্রশাসনের প্রথম ১৮০ দিনের করণীয়।
এরই মধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় ৯০০ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে। এতে আগামী রক্ষণশীল প্রশাসনের করণীয় সম্পর্কিত নির্দেশনা যেমন আছে, তেমনি আছে প্রশাসনকে তথাকথিত ‘উগ্র বাম’‑মুক্ত করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, তার রূপরেখাও।
কী আছে প্রজেক্ট ২০২৫‑এ? প্রজেক্ট ২০২৫‑এর মূল কথা হলো–নির্বাহী বিভাগের হাতে আরও ক্ষমতা থাকতে হবে। বিশেষত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। পল ড্যানসের বয়ানেই শুনুন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে তিনি বলেছেন, ‘পুরো অঞ্চলে (পড়ুন প্রশাসন) রক্ষণশীলদের বন্যা বইয়ে দিতে হবে।’
আর এই রিপাবলিকান বন্যা বইয়ে দেওয়ার জন্য প্রকল্পটি ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘শিডিউল এফ’ নীতিকে পুনর্বহাল করতে চায়, যা বাইডেন প্রশাসনে এসে থমকে গিয়েছিলো। এই শিডিউল এফ হচ্ছে বিদ্যমান সরকারি কর্মকর্তা‑কর্মচারীদের রাজনৈতিক নিয়োগ হিসেবে চিহ্নিত করে চাকরিচ্যুত করা। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার কার্যালয় চায় না বিষয়টি এখনই আলোচনায় আসুক। কারণ, সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে। এ জন্য তারা জানিয়ে দিয়েছে যে, প্রজেক্ট ২০২৫‑এর সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা আলাদাভাবে কাজ করছে, যেখানে ট্রাম্পের নিজস্ব অগ্রাধিকার তালিকাই গুরুত্ব পাচ্ছে।
প্রজেক্ট ২০২৫ প্রকাশিত কৌশলপত্র অনুযায়ী, এডুকেইশন ডিপার্টমেন্টকে বাদ দেওয়া হবে। আর ফেডারেল ট্রেড কমিশন, ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন ও জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে অবশ্যই প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। প্রেসিডেন্টের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ভুয়া খবর ঠেকাতে এফবিআইয়ের সব প্রচেষ্টাকে রদ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি সাম্য ও বৈচিত্র্য নিশ্চিতে পেন্টাগনের গৃহীত উদ্যোগের ইতি ঘটবে। একইসঙ্গে কোভিড টিকা না নেওয়ায় যাদের চাকরি গিয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। এরই মধ্যে সরকারি কর্মীদের ইউনিয়নের নেতারাও শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
আর কী থাকছে? হ্যাঁ, আরও যা আছে, তা শুধু সরকারি কর্মীদের নয়, গোটা আমেরিকার জনগণের জন্যই ভাবনার বিষয়। কারণ, প্রজেক্ট ২০২৫ এর প্রস্তাব ও নীতিকৌশল কার্যকর হলে গর্ভপাতের বিদ্যমান আইন যাবে বদলে। ফলে নারীদের এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে। সাথে সামাজিক নিরাপত্তা, চিকিৎসাসেবা ইত্যাদি চলে যাবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
সাথে ট্রাম্প প্রশাসন ফিরবে, আর অভিবাসীরা নিশ্চিন্ত থাকবে–তা কী করে হয়। ফলে সে দাওয়াইও আছে। বরাবরের মতোই ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার দল ও প্রজেক্ট ২০২৫–উভয়েরই অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে অভিবাসন নীতি। আবারও উঠেছে সীমান্ত দেয়াল তৈরির প্রস্তাব। ড্রিমার প্রকল্প থেকে শুরু করে সব ধরনের অভিবাসনবান্ধব প্রকল্প এক কথায় খারিজ হয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কী হবে? প্রস্তাব অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তন বাবদ অর্থায়ন বন্ধ করার কথা আছে। মনে রাখা জরুরি যে ট্রাম্পের সেই বিখ্যাত বক্তব্য–‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ইস আ হোক্স। হ্যাঁ, এভাবেই দেখে রক্ষণশীলেরা। ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো, যারা জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার, তাদের কপালে দুঃখ আছে। কারণ, এরই মধ্যে শূন্য কার্ব নিঃসরণ সম্পর্কিত প্রতিশ্রুতিকে উড়িয়ে দিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির দিকে মনোযোগ দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছে প্রজেক্ট ২০২৫। আর আছে চীন ও ন্যাটো। একটিকে মোকাবিলা এবং অন্যটিতে অর্থায়ন বন্ধের নীতি এর মূলে। পাশাপাশি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় অর্থায়ন বন্ধের প্রস্তাবও রয়েছে। ফলে ন্যাটো মিত্র তো বটেই অন্য বৃত্তগুলোও নানা ধরনের জল্পনায় ব্যস্ত।
কারা আছে পেছনে? বোঝাই যাচ্ছে যে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট‑উভয় শিবিরে প্রজেক্ট ২০২৫ কেন মুখ্য আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে। এর কৌশলপত্র তো বটেই এ নিয়ে বিস্তর হল্লার পেছনে আছে হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। কারণ, এই প্রজেক্ট ২০২৫ মূলত হেরিটেজ ফাউন্ডেশনেরই উদ্যোগ। এর সাথে এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছে রক্ষণশীল ও অতি রক্ষণশীল শতাধিক সংস্থা। এই সংস্থাগুলোর সাথে যুক্ত আছেন মার্কিন প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে বিভিন্ন সময়ে কাজ করা নানা ব্যক্তি। পাশাপাশি তহবিল গঠনের কাজটিও চলছে সমানতালে। পুরো কাজটিই হচ্ছে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ছাতার তলায়।
প্রজেক্ট ২০২৫‑কে বুঝতে হলে এই হেরিটেজ ফাউন্ডেশনকে বুঝতে হবে। এই ফাউন্ডেশন ১৯৭৩ সালে যাত্রা করে। ব্যবসায়ী জোসেফ কুওরসের আড়াই লাখ ডলার নিয়ে যাত্রা করা এই প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে অ্যাডলফ কুওরস ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে তহবিল পায়। এই ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সাথে সরাসরি সংযোগ রয়েছে চেজ ম্যানহাটান ব্যাংক, ডাউ কেমিক্যাল, জেনারেল মোটরস, মোবিল, ফাইজার, সিয়ারসসহ বহু নামজাদা ও প্রভাবশালী করপোরেশনের। কর রেয়াত পাওয়া এই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া তহবিল দিয়ে চলে। তবে মার্কিন আইন অনুযায়ী, ঠিক কোন কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এতে তহবিল দেন, তা প্রকাশে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, ১৯৮০‑এর দশকে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দা সংস্থা থেকেই ফাউন্ডেশনটি ২২ লাখ ডলারের তহবিল পেয়েছিল। ফলে শুধু আমেরিকা নয়, আমেরিকার বাইরের বিভিন্ন সরকারি‑বেসরকারি সংস্থাও রয়েছে এর তহবিলদাতার তালিকায়।
তালিকার একেবারে পেছনে আছেন সেই স্টিভ ব্যানন। ব্যাননকে মনে আছে? ব্যানন হলেন ভীষণ রকম অভিবাসনবিরোধী সেই ব্যক্তি, ট্রাম্পকে বলা হয় যার ‘ব্রেইন চাইল্ড’। সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের শেষার্ধে প্রশাসন ত্যাগ করে ফিরে যান গণসংযোগ সম্পর্কিত কাজে। সে সময় কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন–অনেক কাজ বাকি আছে। অনেক কিছু গোছানোর বাকি। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রজেক্ট ২০২৫‑এর মতো একটি ‘গোছানো’ কাজ এখন রিপাবলিকান তো বটেই আমেরিকা ও গোটা বিশ্বের সামনে।
প্রজেক্ট ২০২৫ চালাচ্ছেন কারা?
এ তো গেল হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের কথা। এই ফাউন্ডেশনের সরাসরি উদ্যোগে চালু হওয়া প্রজেক্ট ২০২৫‑এর দায়িত্বে রয়েছেন তিন ব্যক্তি। এর মধ্যে প্রথমেই আসে এর পরিচালক পল ড্যানসের কথা। সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মী ব্যবস্থাপনা কার্যালয়ের চিফ অব স্টাফ ছিলেন তিনি। সে সময় তাঁর ব্যবস্থাপনায় ছিল ২ মিলিয়নের বেশি মার্কিন ফেডারেল কর্মী। ২০২১ সালে তিনি ন্যাশনাল ক্যাপিটাল প্ল্যানিং কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। প্রকল্পটির সহযোগী পরিচালক হিসেবে রয়েছেন স্পেন্সার ক্রেটিয়েন, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ সহকারী ছিলেন। সাথে আছেন ট্রুপ হেমেনওয়ে, যিনি ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের কর্মীদের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। একই সঙ্গে ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট নীতি সম্পর্কিত কার্যালয়েরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
মনে হতেই পারে যে, ‘ও আমেরিকা ফার্স্ট! এ আর নতুন কী!’ না, বিষয়টি নতুন নয়। তবে প্রজেক্ট ২০২৫‑এর প্রস্তাবিত কর্মপন্থা ভাবনার উদ্রেক করছে। কারণ, এরই মধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এই প্রকল্প ও এর নানা ধরনের প্রস্তাবকে ‘কট্টর’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এই সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে এমনকি ফক্সও আছে, যা রিপাবলিকান বা রক্ষণশীল ঘরানার বলেই পরিচিত।
সাথে হেরিটেজ ফাউন্ডেশন এর ভিতে থাকায় শঙ্কাটা বেশি হচ্ছে। কারণ, এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের প্রশাসনকে আক্ষরিক অর্থেই চালাত হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। ফলে প্রজেক্ট ২০২৫ যখন বলছে, তাদের লক্ষ্যের সাথে সাংঘর্ষিক বিবেচিত হলেই সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মী ছাঁটাই হবেন, তখন তা গুরুত্বের সাথেই নিতে হয়।
ডেমোক্র্যাটরা কী বলছে?
এ নিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবির এরই মধ্যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে শুরু করেছে। হাউজের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট সদস্য জ্যারেড হফম্যান বলছেন, ‘এই প্রকল্প অতি ডানপন্থী এক রূপকল্প, যা ট্রাম্পকে সুপ্রিম পাওয়ার দিতে তৈরি করা হয়েছে। এটি শুধু ক্ষমতার একচেটিয়াকরণই নয়, একে রাজতন্ত্রে রূপান্তিরিত করবে। এর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট অতি মাত্রায় নির্বাহী ক্ষমতা পাবেন, যা দিয়ে তিনি যা খুশি তাই করতে পারবেন।’
তবে এই প্রজেক্ট ২০২৫ এর পক্ষ থেকে এই সমালোচনার জবাবে উদ্যোগটির মুখপাত্র দ্য হিলকে বলেছেন, ‘এটি অতিরঞ্জিত। বরং জো বাইডেনই নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।’
শুধু কথায় থেমে নেই ডেমোক্র্যাটরা। পাল্টা হিসেবে তারাও নানা কৌশলপত্র সামনে আনছে। এর একটি হচ্ছে ‘স্টপ প্রজেক্ট ২০২৫ টাস্ক ফোর্স’। উদ্যোগটির নাম–থার্ড ওয়ে, যার আওতায় ‘ট্যালেন্ট ব্যাংক’ নামের একটি কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে সেই সব লোকেদের খুঁজে বের করা, যারা বাইডেন বা অন্য কারও নেতৃত্বাধীন ডেমোক্র্যাট প্রশাসনে দলটির ব্র্যান্ডকে তুলে ধরতে পারবে। অর্থাৎ, রিপাবলিকানরা যেমন প্রজেক্ট ২০২৫‑এর নামে প্রশাসন গঠনের পর আনুগত্য বিবেচনায় কর্মীবাহিনী নিয়োগ ও ছাঁটাই করতে চাইছে, ডেমোক্র্যাটরাও ঠিক তেমনি কর্মীবহরে নিজেদের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
অর্থাৎ, নির্বাচনকে সামনে রেখে একেবারে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট শিবির। এমনিতেই নীতিগত দিক থেকে দুটি ভিন্ন ধারার দল। তবে অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এ দুই দলের মধ্যে একটা মতৈক্য ছিল সব সময়। ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রশাসন আসার পর থেকেই এই সাম্যাবস্থা নষ্ট হতে শুরু করে। জো বাইডেন ক্ষমতায় এলে এই বিষয়গুলোর সুশ্রুষা হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি একের পর এক ছায়াযুদ্ধে জড়িয়ে পরিস্থিতির আরও অবনতি করেন। বিশেষত গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ এক অনিঃশেষ গতিপথের দিকে যাচ্ছে। কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিয়েও তাঁর প্রশাসন ব্যর্থই বলা যায়। চীনের সাথে দ্বৈরথে তাঁর প্রশাসন পিছিয়ে। ফলে সব মিলিয়ে অজনপ্রিয়তার এক পাঁকে তিনি আটকা পড়েছেন। এমনকি শেষ মুহূর্তে এসে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বদলের মতো বিষয়ও সামনে আসছে। এই পরিস্থিতিতে দুই পক্ষ যেভাবে পাল্টা নীতি হাজির করছে এবং তা যে মাত্রায় বিপরীত মেরুর, তাতে পরবর্তী প্রশাসন যিনিই গঠন করুন, আমেরিকা তো বটেই গোটা বিশ্বেরই গভীর চিন্তায় পড়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।