Connect with us

নিউইয়র্ক

কোটা আন্দোলনের জেরে নিউইয়র্কে ট্রাভেল ব্যবসায় ধ্বস, ৯৫ শতাংশ ব্যবসা নেই

Published

on

কোটা আন্দোলনের জেরে নিউইয়র্কে ট্রাভেল ব্যবসায় ধ্বস, ৯৫ শতাংশ ব্যবসা নেই

জ্যামাইকার হিল সাইড ১৬৮ স্ট্রীটে এক পার্লারে এসেছেন রুহিনা আলী। গত ২৯ জুলাই সোমবার রাতে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে তার রওয়ানা করার কথা ছিল। স্বামী আর দুই সন্তানকে নিয়ে ৫ বছর পর দেশে যাবেন, আত্মীয় পরিবার পরিজনদের দেখতে পাবেন এমনটা ভেবে বেশ আনন্দিত ছিলেন তিনি বেশ কিছুদিন ধরে। টিকেটও কেটেছিলেন প্রায় ৩ মাস আগে। কিন্তু হুট করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন। জানালেন, ছুটি নিয়েও এবার বাংলাদেশ ভ্রমণ বাতিল করেছেন ।
হুট করে বাংলাদেশে ভ্রমন বাতিলের এ সিদ্ধান্ত কেবল রুহিনার একার নয়, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশি এই সামারে যারা দেশে যেতে চাইছিলেন ভ্রমণ বা অন্যান্য কাজকে কেন্দ্র করে, তারা এখন তাদের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলছেন।
এর কারন হিসাবে তারা বলছেন, বাংলাদেশে চলমান কোটা আন্দোলন ও সহিংসতার কথা। এ অবস্থায় যেকোন দুঘর্টনা ও নাশকতা আবারও ঘটতে পারে । সে আশংকা থেকে মূলত দেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করছেন তারা। আবার যারা দেশে গেছেন, তাদের অনেকেই ফিরে আসতে পারছেন না। হঠাৎ করেই কোটা সংস্কার আন্দোলন এতটা ভয়াবহ হবে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবে, এটা কারও ধারণার মধ্যেই ছিল না। এই অবস্থায় যারা যে পরিকল্পনা করে গিয়েছেন, তারা কাজ শেষ না করায় ফিরতে পারছেন না। আবার অনেকে ঘর থেকে আতংকেও বেরও হচ্ছেন না। বাংলাদেশ থেকে আন্দোলনের সময়ে যারা এসেছেন তাদের অনেকেই জীবন হাতে নিয়ে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত গেছেন বলেও দাবি করেছেন। আর এসবের কারনে প্রভাব পড়েছে নিউইয়র্কে ট্রাভেল ব্যবসাতেও। তারা বলছেন, প্রতিবছর গ্রীষ্মের ছুটিতে বিপুল প্রবাসী সপরিবারে বাংলাদেশে বেড়াতে যান। এ সময় এয়ার টিকেটের চড়া দামন থাকে বলে ব্যবসাও ভাল হয় তুলনামূলক। এমনকী এয়ার টিকেটে বিশেষ সেল ঘোষণা করে এয়ারলাইন্সগুলো। সারা বছরের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও ভালো ব্যবসা করে এই সময়ে। কিন্তু এ বছর সময়টা খারাপ যাচ্ছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় বহু প্রবাসী বাংলাদেশে যাওয়া বাতিল করছেন।
ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর এই সময়ে শুধুমাত্র নিউইয়র্ক থেকেই ৭ থেকে ১০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশে বেড়াতে যান। কিন্তু এ বছর জুলাই কেন্দ্রীক এমন ঘটনায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। ফলে কোনো প্রবাসী চান না এই সময়ে যেতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে। আর এসব কারণে নিউইয়র্কে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে ডিজিটাল ট্রাভেল এস্টোরিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম জানান, নিউইয়র্কে ব্যবসা করেন এমন ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের ৯৫ ভাগ ব্যবসা নেই। যারাও বা টিকে আছে তারা কেবল ওমরাহ প্যাকেজ করে বিধায় টিকে আছে। তিনি বলেন, ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ১৯ বছরে এমন পরিস্থিতি দেখেননি তিনি। বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে কে যাবে? কেন যাবে? যখন প্রবাসীরা শোনে দেশে কারফিউ তখন তারা ভয় পায়। এখন তো বাংলাদেশকে নিয়ে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারনা বাড়ছে। মধ্য জুলাই বিশেষ করে ২০ তারিখের পর সিলেট থেকে বেশিরভাগ যাত্রী আসতে পারেননি। তারা এখন হাজার হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। এয়ারলাইন্স তো মানবে না। তারা ক্ষতিপূরণ বাবদ বেশি অর্থ চার্জ করছে ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে। সব মিলিয়ে বেশ ভোগান্তিতে ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা।
এ সময় অন্যান্য ব্যবসায়ীরা বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও ট্রাভেল ব্যবসায় ধ্বস নামবে। তারা বলেন, অধিকাংশ প্রবাসী দেশে যাত্রা বাতিল করছেন। বিশেষ করে এই মুহূর্তে কেউই পরিবার নিয়ে দেশে যাচ্ছেন না। তবে খুব জরুরি কাজে অনেকেই দেশে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা সুখের নয়। অনেকে যাত্রা সংক্ষিপ্ত করে ফিরে আসছেন।
আমেরিকান ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (অ্যাটাব) সাধারণ সম্পাদক সেলিম হারুণ ঠিকানাকে জানান, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব পড়েছে প্রবাসেও। এই মুহূর্তে অনেকে সপরিবারে দেশে বেড়াতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। যারা স্বল্প সময়ের জন্য দেশে বেড়াতে যেতে চান, তারাও সাহস পাচ্ছেন না যেতে। এই পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হওয়া প্রয়োজন।
নিউইয়র্কের উডসাইডের বাসিন্দা আফসানা জানান, বাংলাদেশ বেড়াতে খুব আনন্দের। কিন্তু এ বছর আর যাওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, যেভাবে আন্দোলনের তীব্রতা ও সহিংসতা বাড়ছে, তাতে পরিবার নিয়ে স্বাচ্ছন্দবোধ করছি না। তাই এই বছর আর দেশে যাওয়া হচ্ছে না। জানা গেছে, শুধু নিউইয়র্ক বা যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। নিজের স্বজনদের নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending