Connect with us

নিউইয়র্ক

সাউথ এশিয়ান হেরিটেজ এসোসিয়েশন অব হ্যামিল্টন আয়োজিত

Published

on

newyork-somoy

দক্ষিন এশিয়ার বসন্ত উৎসব” শীর্ষক বহুবর্ণিল বসন্তের মতই নানান উজ্জ্বল রঙে উদ্ভাসিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি উদযাপিত হয়ে গেল বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা সহকারে। গত ২৬ মে রোববার টরন্টোর নিকটবর্তী হ্যামিল্টন শহরের অন্তর্গত হ্যানন অঞ্চলের উডবার্ন রোডে অবস্থিত মালয়ালী সমাজম্ সেন্টারে সাউথ এশিয়ান হেরিটেজ এসোসিয়েশন অব হ্যামিল্টন এন্ড রেজিওন (SAHAHR) কর্ত্তৃক আয়োজন করা হয়।

বিকাল ৪.০০টার অনতিপরেই উন্মোচিত হলো হলের সুবিশাল পর্দা। সংগঠনের পক্ষে সভাপতি খুরশীদ আহমেদ দর্শকদের ধন্যবাদ দিয়ে সংগঠনের কমিটির সবাইকে মঞ্চে আহ্বান করেন এবং সংক্ষিপ্ত ঘোষণার পর অনুষ্ঠান শুরুর ঘ্ষোণা করেন। এরপর সংগঠনের তরুণ উপস্থাপকদ্বয় বাংলাদেশের লামিয়া সাঈদ এবং নেপালের অশ্মিন শর্মা মঞ্চে দর্শক-শ্রোতাদের সম্ভাষণ জানিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রথমে উদ্বোধনী নাচ হিসাবে ’মুশিকা বাহানা’ পরিবেশনা করে ভারত নাট্যমের শিল্পী সুজাতা সুরেশের পরিচালনায় ’স্বরমুদ্রা ড্যান্স একাডেমি’-এর শিশুশিল্পীদের গ্রুপ। এরপর দক্ষিণ এশিয়ার সাত দেশ আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া, নেপাল, পাকিস্তান, এবং শ্রীলংকার শিশু-কিশোররা যার যার দেশের পতাকা হাতে মঞ্চে উঠে অভিবাদন জানায়।

এরপর বাংলাদেশের অভিবাসী সুমিথ বড়ুয়া নজরুল গীতি ও লোকগীতি পরিবেশন করেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেঘাবি সোনির নেতৃত্বে নটরাজ পারফর্মিং আর্টসএর শিল্পীরা কত্থক নাচের তারানা পরিবেশন করে। তারপর আফগানিস্তানের নাচ দারি ভাষায় ’আফগান পেসারক’ গানের সাথে এবং পশতু ভাষায় ’লায়লা দেরা খাইস্তা দা’ গানের সাথে ও আফগানিস্তানের জাতীয় নাচ ’আট্টান’ নাচ নিয়ে মঞ্চে আসেন বাঙালী শিল্পী পারমিতা করের নেতৃত্বে এনসেম্বল টোপাজ নামের সংগঠন, তাতে আছেন আরো আফগান শিল্পী। তারপর নেপালী লোকনাচ পরিবেশন করেন শিল্পী স্মিতা উপাধ্যায় ও মদন শ্রেষ্ঠা, এবং দিয়া থাপা ও যজ্ঞ গুরুং। তারপর এই সংগঠনে প্রথমবারের মত ভুটানের শিল্পীরা দুইটি পরিবেশনা করে। ভুটানিজ শিল্পী সিংগাইএ গালেম-এর গান ঝাবথারা লিমো-এর সাথে তারা নাচ পরিবেশন করেন। পাকিস্তানের সুফীমতাদর্শিক গান পরিবেশন করেন মজিদ মীর। শিল্পীর এই গানটি ১৯৯৬ সালে ভারত-পাকিস্তান যৌথ আয়োজিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পাকিস্তানের জাতীয় থিম সং ছিল!  এরপর স্বরমুদ্রা ড্যান্স একাডেমির দ্বিতীয় গ্রুপ পরিবেশন করে রামের হরধনু ভঙ্গ ও সীতাকে বিবাহ করার পৌরাণিক কাহিনীভিত্তিক নাচ ’রাম কল্যান’। তারপর আসে গুজরাটি এতিহ্য ও বলিউডের গর্বা নাচের ঐতিহ্যনির্ভর নাচ ’গর্বা নৃত্য’। এরপর শ্রীলংকার প্রবাসী প্রজন্ম ঢোল বাদন ও প্রবাসী শিল্পীদের সমন্বয়ে শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশিত হয়। এরপর ভারতনাট্যমের নৃত্যশিক্ষিকা সুজাতা সুরেশের পরিচালনায় স্বরমুদ্রা ড্যান্স একাডেমির তৃতীয় পরিবেশনা ভারনাট্যমের থিলানা পরিবেশিত হয়া। এ দলে নাচে অংশগ্রহন করেছে এমিলি সাহা(বাংলাদেশ), সুমেধা রায় (পশ্চিমবংগ), এবং ফিয়া, নিয়া, কবিতা, মানসী, প্রিসা, নিশি, জানু ও রেবা, প্রায় সকলেই গুজরাট ও তামিলনাড়–র প্রবাসী প্রজন্ম। তারপর আসে ভারতেরই গুজরাট-সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের আরেক বিখ্যাত নৃত্যকলা গোধন রাস নৃত্য, যা ডানডিয়া রাস নাচের একটা রকমফের। এক হাতে লাঠি নিয়ে নাচের পাশাপাশি ঘরের ছাদ থেকে ঝুলন্ত রিং-এর সাথে সুতো বুননের কাজ চলে। পরিবেশন করে নটরাজ পারফর্মিং আর্টসএর শিল্পীরা। উপমহাদেশের সব কয়টি নাচেই যা উল্লেখযোগ্য তা হলো রঙের উপস্থিতি। বহু বর্ণিল পোশাকে নাচ আর রূপসজ্জা যেন দর্শকদেরকে অনুভূতির অন্য স্তরে নিয়ে যায়!

হল ভর্তি দর্শক-শ্রোতার সারিতে উপস্থিত ছিলেন হ্যামিল্টন, বার্লিংটন, ব্রান্টফোর্ড, সেন্ট ক্যাথারিন, নায়াগ্রা ছাড়াও গ্রেটার টরন্টো এলাকায় বসবাসরত দক্ষিন এশিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী দেশ আফগানিস্তান, ইন্ডিয়া, নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলংকা, মায়ানমার এবং পাকিস্তান বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান সংস্কৃতি প্রেমিক নাগরিকবৃন্দের পাশাপাশি হ্যামিল্টন ও সংশ্লিষ্ট এলাকার ফেডারেল ও প্রাদেশিক সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় মূলধারার মিডিয়া প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, এবং বিপুল সংখ্যায় স্থানীয় নাগরিকবৃন্দ। ঠিক সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে দর্শক পেছনে রেখে আসা নিজ দেশের শাস্ত্রীয় এবং লোক নৃত্যের মোহনীয় নান্দনিকতা বুকে নিয়ে বের হয়ে যান যার যার ঠিকানায়! পরের বছর আবার দেখা হবে এই বসন্ত উৎসবে!

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending