Connect with us

কমিউনিটি সংবাদ

ভাসমান দোকানীদের দখলে ফুটপাত ও ডাইভারসিটি প্লাজা

Published

on

ভাসমান দোকানীদের দখলে ফুটপাত ও ডাইভারসিটি প্লাজা

সৌন্দর্য হারাচ্ছে বাংলাপাড়া জ্যাকসন হাইটস: পর্ব ১

দিন দিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে নিউইয়র্কে বাংলাপাড়া খ্যাত জ্যাকসন হাইটস। যেখানে সেখানে গার্বেজ ফেলায় অনেক স্ট্রিটেই তৈরি হয়েছে আবর্জনার ভাগাড় । সেসব জায়গা থেকে দিন-রাত দূর্গন্ধ ছড়ায়। যে কারণে পথচারি ও বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। এদিকে, ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকানীদের কারণে দিন দিন ঘিঞ্জি এলাকায় পরিণত হতে চলেছে বাংলাদেশী ও সাউথ এশিয়ান কমিউনিটির রাজধানী খ্যাত জ্যাকসন হাইটস।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ডাইভারসিটি প্লাজার পুরো এলাকাই চলে গেছে ভ্রাম্যমান দোকানীদের দখলে। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা আকাশের নীচে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো তাদের অধিকাংশেরই নেই ভেন্ডর লাইসেন্স। অনেকটা অপরিকল্পিতভাবেই যেখানে সেখানে তারা টেবিল পেতে পন্য বিক্রি করছেন। ত্রেতারাও তুলনামূলক কম দামে কেনাকাটার জন্য ভীড় করেন এসব দোকানে। যে কারণে সকাল থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে ডাইভারসিটি প্লাজায়। এতে প্লাজাজুড়ে চিত্ত বিনোদনের পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

প্রতিদিন কাজশেষে ডাইভারসিটি প্লাজায় বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে আসেন জাবেদ ইকবাল ভূইয়া। নিউইয়র্ক সময় এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কারণে ডাইভারসিটি প্লাজায় এখন আর নির্মল চিত্ত বিনোদনের পরিবেশ নেই। পুরো এলাকাই চলে গেছে ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের দখলে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন সারাদিন কাজ করে এসে সন্ধ্যার পর ডাইভারসিটি প্লাজায় বসে একটু সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায় না। সারাক্ষণ ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় ও চেচামেচিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করে।

এদিকে, জ্যাকসন হাইটসের বিভিন্ন ব্লক ঘুরে দেখা গেছে, শুধু ডাইভারসিটি প্লাজা নয় রোজভেল্ট ও ৩৭ এভিনিউ এর ওপর অবস্থিত ৭৩ থেকে ৮৫ স্ট্রিট পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকটি সড়কের দুধারের ফুটপাত চলে গেছে ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের দখলে। এসব ভাসমান দোকানের অধিকাংশই খাবারের দোকান হওয়ায় দিনভর খাবারের উচ্ছিষ্ঠসহ গার্বেজ ফেলা হয় রাস্থার ওপরে। যে কারণে নোংরা আবর্জনা জমে পুরো এলাকায় দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

এছাড়া, ভাসমান দোকানীদের সাথে মুলধারার ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। ডাইভারসিটি প্লাজার এসএম প্রিন্টিং এর স্বত্ত্বাধিকারী মুনির হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার ডলার মাসিক ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল দিয়ে দোকান পরিচালনা করেও কাস্টমার পান না। অথচ, ভাসমান দোকানীরা প্রত্যেকটি দোকানের সামনে টেবিল পেতে পণ্য বেচাকেনা করছে। এতে মুলধারার ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ভাসমান এসব দোকানীদের নিয়ন্ত্রণে কোন কর্তৃপক্ষই কাজ করছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ ব্যবসায়ী।

এদিকে, জ্যাকসন হাইটসে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বাংলাদেশী হওয়ায় সে ব্যবসায়ী কমিউনিটির সমস্যা-সম্ভাবনা দেখভাল করার জন্য রয়েছে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন- জেবিবিএ । একসময় সংগঠনটি বেশ সুনামের সঙ্গে ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করলেও এখন সেটি অনেকটাই অকার্যকর। নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে দুই ধারায় বিভক্ত হয়েছে সংগঠনটি।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কয়েক বছর পর পর নতুন কমিটি নির্বাচন ছাড়া ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এ সংগঠনের তেমন কোন কার্যক্রম এখন আর চোখে পড়ে না। বিশেষ করে প্রতি বছর দুই ঈদের মৌসুমে ভাসমান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মুলধারার ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এলেও তার কার্যকর ও স্থায়ী সুরাহা করতে জেবিবিএ’র কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।

৭৪ স্ট্রিটের ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তা রোকসানা আক্তার বলেন, জ্যাকসন হাইটসের ব্যবসায়ীরা সারা বছরের লোকসান ও ঝুঁকি পুষানোর জন্য ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করেন। কিন্তু, এ দুটি ঈদের সময় ভাসমান ব্যবসায়ীরা পুরো জ্যাকসন হাইাটসকে অস্থায়ী বাজারে পরিণত করেন। তারা যেখানে সেখানে টেবিল ও মাচাং তৈরি করে বিভিন্ন ধরণের পণ্য নিয়ে বসেন। এমনকি অনেক নামী-দামী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে তারা অস্থায়ী দোকান তৈরি করে মানহীন পণ্য বিক্রি করেন। এতে ক্রেতা হারাচ্ছে মূলধারার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ নিয়ে প্রতি বছর বিচ্ছিন্ন ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও তার স্থায়ী সমাধানের কোন পথ কেউ তৈরি করছে না বলে হতাশা প্রকাশ করেন এ নারী উদ্যোক্তা।

এই বিষয়ে জেডিবির একাংশের সাধারণ সম্পাদক এক প্রশ্নের উত্তরে নিউইয়র্ক সময়কে জানান, আমাদের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। আমরা শিগগির একটি সাধারণ সভার আয়োজন করছি।

ডাইভারসিটি প্লাজার অন্যতম উদ্যোক্তা আগা সালেহ জানান, যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তা এখানকার ব্যবসায়ীদের কোনো কাজে আসছে না্। বরং ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এখানে মাদকসেবনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। অপরাধ বাড়ছে, যানজট তেরি করছে। সবার উচিৎ প্লাজা তুলে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করা। তাহলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারবে।

এ নিয়ে জানতে চাইলে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তারেক বলেন, অবৈধ ভেন্ডরদের উচ্ছেদের জন্য বার বার সিটির সংশ্লিষ্ট দফতরকে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ভেন্ডরদের শৃঙ্খলায় আনতে হলে আইনের প্রয়োগ জরুরি বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী নেতা। আর আইন প্রয়োগের জন্য সিটির সংশ্লিষ্ট বিভাগকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending