Connect with us

নিউইয়র্ক

অফশোর ব্যাংকিংয়ের প্রচারে নিউইয়র্কে ৪ এমডি

Published

on

অফশোর ব্যাংকিংয়ের প্রচারে নিউইয়র্কে ৪ এমডি

ব্র‍্যাক ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের উদ্যোগ

মোঃ মুরশেদুল কবীর

প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা (সিইও) অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি

অফশোর ব্যাংকিং এমন এক ধরণের ব্যাংকিং যাতে স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব পরিচালনা করা হয়। এ ব্যবস্থায় বিদেশী উৎস হতে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত ও ঋণ গ্রহণ করা যায়। সম্প্রতিবাংলাদশেব্যাংকের নিদের্শনা মোতাবেক কোন প্রবাসী চাইলে বাংলাদেশে বসবাসরত তাদের আপনজনের নামেও ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে ৩ মাস থেকে০৫ বছর মেয়াদে সর্বোচ্চ ৮.৪০% র্পযন্ত সুদে ফিক্সড ডিপোজিট হিসাব খুলতে পারবেন। অফশোর ব্যাংকিং এর আওতায় সকল আমানত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ব্যতিরেকে গ্রাহকের প্রয়োজনে সহজে বিদেশে স্থানান্তর করা যায় এবং টাকায়ও কনভার্ট করে প্রয়োজন মেটানো যায়। তাছাড়া, সম্প্রতি আয়কর অধ্যাদশে এর মাধ্যমে সরকার অফশোর ব্যাংকিং এর আমানতের উপর আহরিত সুদ সর্ম্পর্ণ করমুক্ত ঘোষণা করছেন। দেশীয় মুদ্রার তুলনায় মার্কিন ডলার তথা বৈদেশিক মুদ্রা অধিক লাভজনক হওয়ায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে এ ডিপোজিটটি খুললে মুদ্রার অবমূল্যায়নজনিত ক্ষতি থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং নিজ প্রয়োজনে যেকোন মুহূর্তে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি ১৯৮৭ সালে প্রথম বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসাবে লাইসেন্স প্রাপ্তির পর অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে সেই সময় কাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি অফশোর ব্যাংকিং হতে রপ্তানি খাতসহ অনেকগুলো প্রকল্পে অর্থায়ন করে দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে।
সম্প্রতি অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতির ওপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ হিসাব গৃহীত আমানতের মাধ্যমে হুন্ডিকে নিরুতসাহিত করবে পাশাপাশি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়িয়ে দেবে। সুতরাং অফশোর ব্যাংকিংয়ে ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয় ও যুগোপযোগী। এ বিষয়ে আমরা প্রবাসীদের মাঝে সচতেনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উক্ত হিসাবে আমানত সংগ্রহে চেষ্টা চালিয়ে যাব।

আবুল কাশেম মো. শিরিন

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক পিএলসি 

অফশোর ব্যাংকিংয়ে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল মূলত ঋণ নির্ভর। এতে সরাসরি গ্রাহকরা সেভাবে যুক্ত ছিলেন না। এখন আইন করে অফশোর ব্যাংকিংয়ে স্থায়ী আমানতে ডলার সংগ্রহের এমন পদক্ষেপ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়িয়ে রিজার্ভ সংকট ও পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলাসহ বিদেশী বিনিয়োগকে উতসাহিত করবে। কেবল তাই নয়, গ্রাহক পর্যায়ে তো বটেই আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আমেরিকায় যে গ্রাহক ডলার রাখেন ব্যাংকগুলোতে সেখানে বড়জোর ২ থেকে ৩ শতাংশ সুদ পায় আর দেশীয় ব্যাংকগুলোতে রাখলে সেখানে পাবে ৮ শতাংশের বেশি। এটি বড় পার্থক্য । বৈধ চ্যানেলে ডলার উচ্চ সুদের বিপরীতে যেমন দেশে নিতে পারবে ঠিক তেমনি দেশ থেকেও ফেরত আনার সুযোগ থাকছে । বর্তমানে যে অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থা রয়েছে তাতে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর ( টিআইএন ) না থাকলে আমানতের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়। আর টিআইএন থাকলে ১০ শতাংশ কর। এখন কোন প্রবাসী স্থায়ী আমানত করলে নতুন আইনে কোন কর দিতে হবে না। একই সাথে অফশোর ব্যাংকিং লেনদেনে যে সুদ আসবে তার উপর কোনো কর আরোপ করা হবে না। অ্যাকাউন্ট পরিচালনার জন্য কোনো সুদ বা র্চাজ দিতে হবে না। এতে করে গ্রাহক উপকৃত হবে , ব্যাংকগুলো উপকৃত হবে এমনকি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে । এখানে আস্থার সংকটও নেই প্রবাসীদের , কেননা বাংলাদেশ ব্যাংক স্বয়ং এটির দায়িত্বে । গ্রাহক নিজে তার হিসাব পরিচালনা করবে বিদেশে বসে সংশ্লষ্টি ব্যাংকের অনলাইনরে মাধ্যম। ব্যাংক কেবল অপশন তৈরি করে দবে। পাসওর্য়াড চলে যাবে গ্রাহেকর ই-মইেল। গ্রাহক নিজে সিদ্ধান্ত নেবে ৩ ,৬ নাকি র্দীঘ সময়ের জন্য ডলার স্থায়ী আমানত হিসাবে । তবে সবার ওপরে গ্রাহককে নিজে সিধান্ত নিতে হবে ব্যাংকের আির্থক সুস্বাস্থ্য ওপর নর্ভির করে অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টি।
ডাচ্ বাংলার দেড় কোটি গ্রাহক। আমরা দেশে আমানত সংগ্রহে কোন করপোরটে প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করিনা। ক্ষুদ্র গ্রাহকদের প্রাধান্য দিচ্ছি। আমাদের পরিরচালনার খরচও অনেক কম। কস্ট অব ফান্ড মাত্র ২ শতাংশ যা অেনক ব্যাংকের ৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এখন অফশোর ব্যাংকিং য়ে বৈদেশিক মুদ্রায় যে আমানত গ্রহণ করবে ব্যাংকগুলো তা নিয়ে হৈচৈ করে লাভ হবে না বরং এ সংক্রান্ত প্রোডাক্ট তৈরি করতে হব। দেখেতে হবে প্রোডাক্ট ঠিক আছে কিনা। একই সাথে বাংলােদশ ব্যাংক , সরকার সংশ্লষ্টি মন্ত্রণালয়, বিদেশে বাংলাদশেী দূতাবাসদেরও প্রচারণা চালাতে হবে গ্রাহকদরে আস্থা ফরোত এ সব গ্রহণ করলে তবেই না রোড শো বলেন আর যাই বলেন সব পদক্ষেপ কার্যকর হবে।

সেলিম আর এফ হোসেন

ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি

বাংলাদেশে বিদেশী লেনদেনে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম থাকলেও বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত সংগ্রহের বিষয়টি সরকারের তরফ থেকে আইন করে বাধ্যতামূলক করার প্রচেষ্টা আগে ছিল না। এমন পদক্ষেপ, এটি একটি নতুন ধারণা। বাংলাদেশে ব্যাংক বিদেশী মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে নিয়মনীতি সহজীকরণ করছে। এর ফলে বিদেশে বসে গ্রাহক অনলাইনের মাধ্যমে দেশের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে উচ্চ ও আর্কষণীয় মুনাফায় ডলার সঞ্চয় করতে পারেবন আবার প্রয়োজনে তা টাকায় রুপান্তর করতে পারেবন , চাইলে উত্তোলনও করতে পারবেন। বিদেশের ব্যাংকগুলো কিন্তু নামমাত্র সুদ দিয়ে অর্থ সঞ্চয় করে আবার দেশের ব্যাংকগুলো বিদেশী বা অনাবাসী কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় যে আমানত গ্রহণ করবে তাতে নিরাপত্তা কিন্তু থাকছে। কেননা এটি একটি স্বাভাবকি ব্যাংকিং পদ্ধতি । বিদেশে যে বাংলাদেশী বসবাস করছেন তার পক্ষে দেশে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশী নাগরিক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবনে। সহায়তাকারী হিসাবে তারা অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারেবন। চাইলে দেশে ডলার আনতে পারবেন চাইলে নিতে পারেবন ওই অ্যাকাউন্টরে মাধ্যম। মূলত এটি বাংলাদশ ব্যাংকের প্রোডাক্ট। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়বে।

মাসরুর আরেফিন

ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, সিটি ব্যাংক পিএলসি

বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব (আরএফসিডি) ও অফশোর ব্যাংকিং-এ দুই ব্যবস্থাই আমাদের ব্যাংক খাত ও অর্থনীতির জন্য যুগান্তকারী ঘটনা। এর ফলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের পাশাপাশি ডলারের যোগানে আরও নতুন দুটি খাত যুক্ত হয়েছে। একটি আরএফসিডি বা নগদ ডলারের সরবরাহ। অন্যটি অফশোর ব্যাংকিংয়ের স্থায়ী আমানত। দুটিই আমদানি ব্যয় মেটাতে কাজে লাগছে। আরএফসিডির ডলার নগদ ডলার হলেও আমরা নানা বৈধ পদ্ধতির মাধ্যমে সেটা দিয়েও আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছি। আবার এই দুই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাপ্ত ডলার আন্তব্যাংকে বিক্রি করা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ডলার-টাকা ‘সোয়াপ’ বা বিনিময় করে আমরা টাকার সরবরাহও বাড়াতে পারছি। দেশের নগদ ডলারের স্থিতি সম্প্রতি ৮০ লাখ ডলারে নেমে এসেছিল। আমাদের আরএফসিডির কারণে কিছুদিন আগে তা ৫ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এই ৫ কোটি ডলারের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ ডলারই ছিল সিটি ব্যাংকের। বর্তমানে আমাদের ৫ হাজার ৫৮২টি আরএফসিডি হিসাবে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার জমা হয়েছে। এ ছাড়া অফশোর ব্যাংকিংয়ের আওতায় সাড়ে ৮ শতাংশে বিদেশি ঋণ নিয়ে আমদানি দায় শোধের চেয়ে দেশের মানুষকে সাড়ে ৭ শতাংশ সুদ দিয়ে স্থায়ী আমানত নেওয়াটা অনেক ভালো। বর্তমানে অফশোর ব্যাংকিংয়ের আওতায় বিভিন্ন মেয়াদি স্থায়ী আমানতের সুদহার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। আর এই আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত।
অফশোর ব্যাংকিংয়ের আওতায় এখন আমাদের আমানতের স্থিতি ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আরেকটি হিসাবে ৫০ লাখ ডলার আসছে। বাংলাদেশে বাস করছেন, এমন যে কেউ এখন আমাদের ১৭৫টি শাখা-উপশাখায় গিয়ে অফশোর আমানতের জন্য ডলারের চলতি হিসাব খুলতে পারছেন। তারপর বিদেশে তাঁর আত্মীয়স্বজন বন্ধু বা ব্যবসায়িক অংশীদারকে বলছেন ওই হিসাবে ডলার পাঠাতে। আমরা এটাকে বলছি ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক হিসাব। এটিও অফশোর আমানত হিসাব, কিন্তু দেশে থাকা মানুষদের জন্য। আমাদের এ ধরনের হিসাবে জমা হয়েছে ২৯ লাখ ডলার। মানুষ ভালোমতো জানলে আমাদের ব্যাংকগুলোর অফশোর আমানত হিসাবে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলার আসবে। ১৫ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশ মরিশাসে যদি অফশোর আমানত ৮০০ বিলিয়ন ডলার থাকতে পারে, তাহলে ৪৭০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির বাংলাদেশে কেন ৫০ বিলিয়ন ডলার অফশোর আমানত থাকবে না? অফশোর আমানত একদিন এ দেশে ডলার আনার দ্বিতীয় বড় খাত হবে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending