নিউইয়র্ক
ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে মিলিয়ন ডলার চুরি
Published
9 months agoon

তদন্ত ফাইল গায়েব
বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকা মানবজমিন-এ গত ৬ জুন বৃহস্পতিবার প্রধান শিরোনাম করা হয় “ওয়াশিংটন দূতাবাসে মিলিয়ন ডলার চুরি, তদন্ত ফাইল গায়েব”।
এতে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। আত্মসাৎ করেছে দূতাবাসের এক লাখ ৭৬ হাজার ডলারের ইমার্জেন্সি ফান্ড।
এছাড়া দূতাবাসের অ্যাকাউন্ট থেকে কৌশলে সরানো হয়েছে আরও প্রায় সোয়া তিন লাখ ডলার। সেই চুরির প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সংবাদটিতে বলা হচ্ছে, শুধু সিডর ইমার্জেন্সি ফান্ড বা দূতাবাসের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লোপাট নয়, রাষ্ট্রদূতের বাসভবন (বাংলাদেশ হাউস) মেরামতেও ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
চুরির এই ঘটনার প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ মিলেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। রাষ্ট্রদূতের রিপোর্ট, পররাষ্ট্র দপ্তরে জমা পড়া অভিযোগ, মানবজমিন প্রতিবেদকের সরজমিন ওয়াশিংটনে অনুসন্ধান, হাতে আসা নথি এবং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপে অভিযোগগুলোর সত্যতা মিলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময়ে দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।
জানা গেছে, সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি লাগয়ো মেরিল্যান্ডে বেথেসডা হাইবরো এলাকায় থাকা বাংলাদেশ হাউস নির্মাণে। বাড়ির জমিসহ বাজারমূল্য (রিয়েলটর প্রতিষ্ঠান রেডফিন ও জিলোর তথ্য) ৪.২৩ মিলিয়ন থেকে সর্বোচ্চ ৫.১ মিলিয়ন ডলার। বাড়িটি মেরামতেই (কাঠামোগত সংস্কার এবং সৌন্দর্য্য বর্ধনে) বিল দেখানো হয়েছে ৬ মিলিয়ন ডলার। ৬০ কোটি টাকায় সংস্কার করা বাড়িতে এতটাই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে যে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বাড়িটি উদ্বোধনের কয়েক মাস পর ছাদে ফাটল ধরেছে।
ওয়াশিংটনে সিস্টেমেটিক দুর্নীতি নিয়ে রহস্যজনক কারণে শুরু থেকেই লুকোচুরি চলছে। ওয়াশিংটন মিশনের ১ লাখ ৪৬ হাজার ডলার গেল কই? এই শিরোনামে ঘটনার অংশবিশেষ তুলে ধরে গত বছরের মার্চে মানবজমিন একটি রিপোর্ট করেছিল। সেই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে পুরো বিষয়টি তদন্তে তখন ৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নাম প্রস্তাব করে একটি ফাইল উঠেছিল। কিন্তু আজ অবধি তদন্তটি হয়নি।
এ প্রসঙ্গে সাপ্তাহিক নিউইয়র্ক সময় থেকে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বশীল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, ২০২১ সালে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার সময় আমরা কেউ-ই ছিলাম না। বিষয়টি পুরানো এবং তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত শেষ না হলে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব না। তদন্ত শেষ হলে এ সম্পর্কে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সবশেষ অবস্থা অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি। এ সময় ঠিক কতো ডলার খোয়া গেল এমনটা জানতে চা্ওয়া হলে তিনি আরো জানান, মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে কিনা সেটি এখন হিসাব নিকেশ করা সম্ভব নয়।
ওয়াকিবহাল সূত্রের দাবি, ওয়াশিংটনের পুকুর চুরির উপযুক্ত তদন্ত এবং প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আবদুল মোমেন অবধি ফাইলটি উঠেছিল। মন্ত্রী বদল হয়েছে, কিন্তু আজও নামেনি ফাইলটি। এটি রহস্যজনক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকের তথ্য—ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ডরমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে বেহাত হওয়া কয়েক লাখ ডলারের (ইমার্জেন্সি তহবিল) একটি বড় অংশ ক্যাসিনোতে গেছে বলে দূতাবাসকে জানিয়েছে আমেরিকান সিটি ব্যাংক। তারা এর প্রমাণ হিসাবে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তার এটিএম কার্ডের বিস্তারিত শেয়ার করেছে। আচমকা দূতাবাসের ডরমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন এবং কয়েক মাসের ব্যবধানে অ্যাকাউন্টটি খালি করার বিষয়টি সন্দেহজনক ঠেকে আমেরিকান সিটি ব্যাংকের ম্যানেজার (ভাইস প্রেসিডেন্ট) সাচা খানের কাছে। তিনি চিঠি দিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করেন।
মানবজমিনের হাতে আসা ডকুমেন্ট মতে, ওয়াশিংটনে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিনের বিদায় এবং পরবর্তী রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামের দায়িত্ব গ্রহণের মুহূর্তে (ট্রানজিশন পিরিয়ডে) অ্যাকাউন্টটি খালি করার ঘটনা ঘটে।
ওয়াশিংটন দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানাজানির পর রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়। কিন্তু বিষয়টি যাতে কোনো অবস্থাতেই গণমাধ্যমে প্রকাশ না পায় এজন্য অফিসারদের নিয়মিত বিরতিতে ডেকে ব্রিফ করে সম্ভাব্য সব ছিদ্র বন্ধ করা হয়। অনেকটা নীরবেই তথ্যানুসন্ধান শুরু হয় এবং ঘটনার সত্যতা পায় সরকার।
এদিকে ওয়াশিংটনে চুরির তদন্তের ফাইল গায়েবের বিষয়টি অস্বীকার করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রশাসন অনুবিভাগ। দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, ফাইলটি গায়েব নয় বরং এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। গত বছরে নেয়া তদন্তের নীতিগত সিদ্ধান্ত এখনো বহাল রয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের আগে ফাইলটি উঠেছিলো বলে তা এখন অনেকটাই অকার্যকর। মন্ত্রী পদে পরিবর্তনসহ নানা কারণে পূর্বের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি নতুনভাবে উপস্থাপন করে তার মতামত নিয়েই স্পর্শকাতর ওই ঘটনার তদন্ত করতে হবে, এটাই সঙ্গত। বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সদ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আবদুল মোমেন মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, বিদায়ের আগে অনেক কাজ হলো কিন্তু দুর্ভাগ্য, চুরির তদন্তটি শুরু করে আসতে পারিনি। তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এই তদন্ত বেশিদূর অগ্রসর হবে না।
You may like

ফ্যাসিবাদের উত্থান-পতন

আন্তর্জাতিক আইন: যেন শুধু ক্ষমতাবানদের স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার

মিশিগানে আল-আকসা সুপারমার্কেটের গ্র্যান্ড ওপেনিং সহস্রাধিক ক্রেতার ঢল

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তার ৬২৭ ভাগ বেড়েছে
