Connect with us

কমিউনিটি সংবাদ

নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন

Published

on

নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন

বাংলাদেশ দূতাবাসে চুরির অর্থ ক্যাসিনোতে

এবার ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ডরমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে লোপাট হওয়া কয়েক লাখ ডলার ক্যাসিনোতে যাওয়ার খবরে নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।
বাংলাদেশ দূতাবাসে বিরাট এই চুরির ঘটনা নিয়ে এযাবৎ মাথাব্যাথা দেখা যায়নি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের। তবে সেই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কিনা? তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাইডেন সরকার। দেশটির বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের এক কর্মকর্তা বিষয়টি খোঁজ-খবর নিতে বিশেষ দায়িত্ব পেয়েছেন বলে খবর বাংলাদেশ দূতাবাসের। নিউইয়র্ক সময়ের সঙ্গে আলাপে দূতাবাসের এক কর্মকর্তা গত বুধবার বলেন, এতোদিন বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের আওতাধীন ছিলো। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করার। কারণ এর সঙ্গে বাংলাদেশের দুর্নীতি বিরোধী শূণ্য সহনশীলতার প্রশ্ন জড়িত। কিন্তু চুরির বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় এখন এ নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। দুর্নীতির মাধ্যমে নীরবে সরিয়ে নেয়া দূতাবাসের মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে কোনো অপকর্মে ব্যয় হয়েছে কিনা? তা খতিয়ে দেখছে তারা। ধারণা দেয়া হয়েছে ডরমেন্ট অ্যাকাউন্টটি যে ব্যাংকে ছিলো এবং যে ব্যাংকের এটিএম কার্ড ব্যবহার করে ক্যাসিনো সংলগ্ন বুথ থেকে অর্থ সরানো হয়েছে তারা সেই ব্যাংক দু’টির কতৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলবে। বাংলাদেশি ওই কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগ বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক আমলা, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী রাজনীতিবিদ এবং মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে বাংলাদেশে অভিযুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানো ব্যবসায়ীদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। এলিট ফোর্স র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করে ২০১৮ সালে ট্রেনিংসহ ওই বাহিনীকে দেয়া সব রকম সহায়তা বন্ধের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে র্যাব এবং বাহিনীর ৭ শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক তলানীতে গিয়ে ঠেকে। পরবর্তীতে তারা অবাধ, সুষ্ঠু এবং সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করে। তারা এ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের ওপর ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করে। কিন্তু মজার বিষয় ছিলো চাপ-তাপ বা কোন ম্যাজিকেই যখন শেখ হাসিনা সরকারকে নমনীয় করা যাচ্ছিলো না, তখন বাইডেন প্রশাসনের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ খুবই সাদামাটাভাবে বাংলাদেশ সফরে যান। সঙ্গে ছিলো তার অফিসের টেকনিক্যাল একটি টিম। বাইডেন প্রশাসনের অত্যন্ত প্রভাবশালী কর্মকর্তা রিচার্ড নেফিউ বাংলাদেশ সরকারের কোনো মন্ত্রী বা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেননি। তিনি নিজের অবস্থানের জানান না দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, দুর্নীতি দমন কমিশন, আইনশৃংখলা বাহিনীর কাউন্টার টেরোরিজম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইউনিটসহ মাঠ প্রশাসনের দুর্নীতি, অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দিনের পর দিন মিটিং করেন। ওই সব মিটিংয়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি রোধে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিঃশর্ত সহায়তার প্রস্তাব করেন। তিনি মানবাধিকার, গণতন্ত্র বা নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলেননি। যা ছিলো সরকারি আমলাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। কিন্তু বাংলাদেশ ছেড়ে আসার সময় রিচার্ড বিভিন্ন সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার দিয়ে তার সফরের বিস্তারিত জানিয়ে আসেন। যা পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক প্রভাব অক্ষুন্ন রাখতে বছরের পর বছর গবেষণা কর্মে যুক্ত স্যাংশন এক্সপার্ট রিচার্ড নেফিউ’র আগস্টের দক্ষিণ এশিয়া সফর বিশেষ করে ওই অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করা বাংলাদেশে তার কার্যক্রম এবং কথাবার্তার দিকে ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছিলেন নিউইয়র্কের একাধিক বিশ্লেষক। দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত তার একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ টেনে এক বিশ্লেষক নিউইয়র্ক সময়কে বলেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কতটা উদ্বিগ্ন সেই সাক্ষাৎকারে তিনি প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া তিনি এটি রোধে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে কতটা বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা দিবে, তাও খুলে বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ’র সেটি ছিল বাংলাদেশে প্রথম সফর। তিনি তার সফরের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, দুর্নীতি দমন ও অর্থ পাচারের মতো অভিন্ন সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করছে। আমার এখানে আসার অন্যতম কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ এবং এ দেশের মানুষ কীভাবে দুর্নীতির মুখোমুখি হচ্ছে, সেটা আরও ভালোভাবে জানা। পাশাপাশি এটাও খুঁজে দেখা, বাড়তি কী কী উপায় আছে, যেখানে আমরা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারি। এই মুহূর্তে সহযোগিতার অবস্থাটা ভালো। তবে এই সহযোগিতা আরও গভীর করার প্রয়োজনীয়তা খুঁজে দেখাও আমার এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। রিচার্ড নেফিউ বলেন, অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত লোকজন নানাভাবে অপরাধকর্মটি করে থাকেন। নতুন অনেক পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া এসব অপরাধী ব্যবহার করেন। নতুন অনেক আর্থিক উপায় যেমন আছে, তেমনি ট্রানজিট পয়েন্টও আছে।
বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমার এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা কীভাবে একসঙ্গে তদন্ত করতে পারি, অপরাধীদের খুঁজে বের করতে পারি, সমস্যার সমাধান করতে পারি—এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের ‘বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’সহ দুই দেশের মধ্যে এরই মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সহযোগিতা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সহযোগিতার সুনির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমি এখনই সব বলতে চাই না। শুধু এটুকুই বলবো, প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা আমাদের মধ্যে রয়েছে। এফবিআই এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। অর্থ পাচারে যুক্ত ব্যক্তিদের খুঁজে পেলে যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে?
প্রথম আলোর এমন প্রশ্নে রিচার্ড নেফিউ বলেন, প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে অভিযোগ প্রমাণের পর ওই ব্যক্তির সম্পদ জব্দ করা। পাচার হওয়া টাকা যাতে অন্য কোথাও না যায়, সেটি নিশ্চিত করা। যে দেশ থেকে অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে, সে দেশে যোগাযোগ করা হয়। অর্থাৎ অর্থ জব্দ করার পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটকানো। আর পুরো বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান আইন অনুসরণ করেই করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ক্ষমতা দেয়া আছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতির ঘটনা যেখানেই হোক, পাচার যে দেশেই করা হোক যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার নিরাপত্তার স্বার্থে এসব খুঁজে দেখে এবং আটক, বহিস্কার কিংবা এ দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। স্মরণ করা যায়, বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী সম্পাদিত দেশটির অন্যতম সেরা সংবাদপত্র মানবজমিনে গত ৬ই জুন “ওয়াশিংটন দূতাবাসে মিলিয়ন ডলার চুরি, তদন্ত ফাইল গায়েব” শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছাপা হয়। যা নিউইয়র্ক সময়সহ যুক্তরাষ্ট্রের সব কটি কাগজে রি-প্রিন্ট হয়েছে। ওয়াশিংটন নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের রিপোর্ট, পররাষ্ট্র দপ্তরে জমা পড়া অভিযোগ, মানবজমিন প্রতিবেদকের সরেজমিন ওয়াশিংটনে অনুসন্ধান, পত্রিকাটির হাতে থাকা সিটি ব্যাংকের চিঠিসহ অন্যান্য নথি এবং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে সেই রিপোর্টে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে, ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার কীভাবে একটি প্রভাবশালী চক্র হাতিয়ে নিয়েছে। রিপোর্টে দূতাবাসের সিডর ফান্ডের ১ লাখ ৭৬ হাজার ডলারসহ অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার চুরির তথ্য-প্রমাণ হাজির করা হয়েছে। তাছাড়া সরকারের ভেতরে থাকা শক্তিশালী চক্রটি রাষ্ট্রদূতের বাসভবন পুননির্মাণে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার সরিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিটি ব্যাংকের চিঠির রেফারেন্স দিয়ে মানবজমিনের রিপোর্টে দূতাবাসের অ্যাকাউন্ট থেকে বেহাত হওয়া কয়েক লাখ ডলারের বড় অংশ ক্যাসিনোতে গেছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, দূতাবাসের কোন কর্মকর্তা, কোন মেশিন ব্যবহার করে এটিএম কার্ড দিয়ে অর্থ বের করে নিয়েছেন সিটি ব্যাংক সেটিও নাকি বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending