যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে বাড়ছে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা। অ্যামেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে আমেরিকায় শিশু মারা গেছে এর আগের বছরের তুলনায় তিন শতাংশ বেশি।
সিডিসি জানিয়েছে, ২০২২ সালে এক বছরের কম বয়সী ২০ হাজার ৫০০ শিশু মারা যায়। সামগ্রিকভাবে প্রতি এক হাজার শিশু জন্মের বিপরীতে ৫.৬ টি শিশুর মৃত্যু হয়। যা আগের বছরের তুলনায় তিন শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আরো জানাচ্ছে, ২০২২ সালে কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি ছিল, প্রতি এক হাজার শিশু জন্মের সময় মারা গিয়েছিল প্রায় ১১ টি শিশু। তবে আমেরিকান ইন্ডিয়ান এবং আলাস্কা নেটিভ শিশুদের মধ্যে হার এক বছরে ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, প্রতি এক হাজার জীবিত শিশুর বিপরীতে মারা গেছে ৯ টির বেশি শিশু। এদিকে শ্বেত শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর হার গড়ের চেয়ে বাড়লেও অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীর তুলনায় কম রয়েছে। প্রতি এক হাজার শিশুর জন্মের জন্য প্রায় ৪.৫ টি শিশু মারা গেছে।
বলে রাখা ভালো, ১৯৯৫ সাল থেকে ধারাবাহিক ট্র্যাকিং শুরু হওয়ার পর থেকে শিশুমৃত্যুর হার নিম্নমুখী রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হারগুলো এখনও সমকক্ষ দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আবারও শিশু মৃত্যু হার বৃদ্ধি পাওয়ায়, যে কোন বৃদ্ধি উদ্বেগের কারণ। এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডারের সমাজবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক এবং জনসংখ্যাবিদ আমান্ডা জিন স্টিভেনসন বলেন, ‘শিশু স্বাস্থ্য আমাদের কাছে থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সূচকগুলির মধ্যে একটি।’ তিনি বলেন, ‘শিশুমৃত্যুর হার কমছে না, এটা অনেক বড় ব্যাপার। এমনকি শিশু মৃত্যুর হার একই থাকাও ভাল নয়। আমাদের দেখতে হবে যে এই সংখ্যাগুলো হ্রাস পাচ্ছে এবং দ্রুত। এর কারণ এটি অনেক বেশি।’
সিডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এদেশে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে জন্মগত সমস্যা। এটি প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর মধ্যে একটি মৃত্যু ঘটায়। অপর ১৪ শতাংশ সংক্ষিপ্ত গর্ভধারণ এবং জন্মের সময় কম ওজনের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যাধিগুলোর কারণে ঘটেছে। সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম, অনিচ্ছাকৃত আঘাত এবং মাতৃত্বকালীন জটিলতাও অন্যতম শিশুমৃত্যুর কারণ। এছাড়া মাতৃত্বকালীন জটিলতায় শিশু মৃত্যুর হার ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৯ শতাংশ বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, শিশু স্বাস্থ্য মাতৃস্বাস্থ্যের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে জড়িত এবং যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধারে গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবোত্তর সময়ে নারীদের মধ্যে উচ্চ মৃত্যুর হার নিয়ে লড়াই করেছে।
স্টিভেনসন ২০২২ সালে শিশুমৃত্যুর হার বৃদ্ধিতে কোভিড মহামারির ভূমিকা থাকতে পারে বলেও ধারণা করছেন। ২০২১ সালে কোভিডের বড় ধরনের ঢেউয়ের সময় করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসা গর্ভবতী নারীদের মধ্যে সংক্রমণ ২০২২ সালে জন্ম নেয়া শিশুদের প্রভাবিত করতে পারে।
এছাড়া সাম্প্রতিক গবেষণায় শিশু মৃত্যু এবং গর্ভপাতের বিধিনিষেধের মধ্যেও কিছু সংযোগ দেখানো হয়েছে। সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, গর্ভপাতের বিধিনিষেধের পর যে ১৪টি স্টেটে গর্ভপাতের উপর প্রায় সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে, তার মধ্যে দুটি বাদে সকল স্টেটেই ২০২২ সালে গড়ের চেয়ে বেশি শিশু মৃত্যুর হার ছিল।