২০২৩ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলের ১ লাখ ৪৬ হাজার শিক্ষার্থী স্থায়ী আবাসনে ছিলো না। যা রেকর্ড সংখ্যক। সিটির চলমান আবাসন সংকট এবং অবৈধ অভিবাসীদের ঢল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
গেল বছর নিউইয়র্কের অন্যতম বরো ব্রুকলিনের বাসিন্দা জেসিকা বেলট্রান অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তার অ্যাপার্টমেন্ট হারান তখন তিনি এবং তার দুই সন্তান অস্থায়ীভাবে একটি শেল্টারে বসবাস শুরু করেন।
আরেকজন ৩৭ বছর বয়সী জেসিকা। যিনি একজন মেডিকেল ও ডেন্টাল অফিসের রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। তার ৫ বছর বয়সী অটিস্টিক ছেলে লোগানের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার খুঁজে না পাওয়ায় এরই মধ্যে চাকরি হারান। এক বছর পরও, তিনি এফোরটেবল হাউজের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেসিকা বলছেন, এটি যে কারও সাথে ঘটতে পারে। বন্যা, আগুন, চাকরি হারানো—মাত্র একটি অপ্রত্যাশিত সমস্যাই একজন মানুষকে গৃহহীন অবস্থায় ফেলে দিতে পারে। আর নিউ ইয়র্ক সিটিতে, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শিশু গৃহহীন।
গৃহহীন শিক্ষার্থীর সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে:
অ্যাডভোকেটস ফর চিলড্রেন অফ নিউ ইয়র্ক-এর তথ্য অনুযায়ী, গত স্কুল বছরে নিউ ইয়র্ক সিটির ১ লাখ ৪৬ হাজার পাবলিক স্কুল শিক্ষার্থী, অর্থাৎ প্রতি আটজনের একজন, কোনো এক সময়ে স্থায়ী বাসস্থান ছাড়াই ছিল। এটি এর আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেড়েছে।
নিউইয়র্ক সিটির অন্যতম বৃহত্তম গৃহহীন আশ্রয় পরিচালনা করে এমন প্রতিষ্ঠান প্রধান উইনের প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টিন কুইন বলছেন, এই শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই শহরের বিভিন্ন আশ্রয়ে ছিল বা অস্থায়ীভাবে বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে থাকছিল। এই সংখ্যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
অভিবাসী সংকট ও আবাসন সমস্যাৎ:
গত কয়েক বছরে দক্ষিণ সীমান্ত অতিক্রম করে আসা অভিবাসীদের ঢল সিটির আশ্রয়ব্যবস্থাকে আরও চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ২০২২ সাল থেকে শহরে ২ লাখ ১০ হাজার অভিবাসী এসেছে, যার বেশিরভাগই লাতিন আমেরিকা থেকে, এবং কিছু আফ্রিকা ও এশিয়া থেকে।
তবে, ক্রিস্টিন কুইন বলেন, এটিকে শুধু অভিবাসী সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা সঠিক নয়। এটি সিটির বৃহত্তর আবাসন সংকটের একটি অংশ।
গৃহহীনতার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব:
গৃহহীনতা শিশুদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। স্টেটের তথ্য অনুযায়ী, ৯৪ শতাংশ গৃহহীন শিক্ষার্থী কৃষ্ণাঙ্গ বা হিস্পানিক, এবং ৩৫ শতাংশের প্রথম ভাষা ইংরেজি নয়। গৃহহীন শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায়ও গৃহহীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং তাদের হাই স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার সম্ভাবনা কম।
শিক্ষাগত বাধা ও অভিজ্ঞতা:
শেল্টার হোমেথাকা শিক্ষার্থীদের জন্য সিটি পরিবহন, কাউন্সেলিং এবং খাবার, পোশাক ও পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী সরবরাহের মতো সহায়তা দিয়ে আসছে। তবে, পরিবারগুলো প্রায়ই এক বরো থেকে অন্য বরো স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি ব্যাহত হয়।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গৃহহীন শিক্ষার্থীদের অর্ধেকই নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকতে পারেনি, এবং প্রতি ৩২ জন গৃহহীন শিক্ষার্থীর একজনকে স্কুল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সিটির গৃহহীন পরিষেবা বিভাগের এক মুখপাত্র জানান, আমরা শিশুদের শিক্ষার অধিকার সুরক্ষায় কাজ করছি এবং শিক্ষাগত বিঘ্ন কমাতে চেষ্টা করছি।