তিন মাসের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে এ সময় এই শুল্ক থাকছে ১০ শতাংশ বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি এরই মধ্যে। বুধবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে এ ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, ‘চীন বিশ্বের বাজারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধার যে ঘাটতি দেখিয়েছে, তার ভিত্তিতে আমি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ধার্য করছি। এটা তাৎক্ষণিক কার্যকর হবে।’
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘৭৫টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এসব প্রতিনিধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ, অর্থ বিভাগ ও ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) রয়েছে। দেশগুলো বাণিজ্য, বাণিজ্য বাধা, শুল্ক, মুদ্রার মানে কারসাজি ও অশুল্ক বাধাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে আলোচনার অনুরোধ জানিয়েছে।’
এদিকে, ট্রাম্পের এ শুল্ক স্থগিতের পরও ‘শান্তির আগে ঝড়’-এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে নিউইয়র্কের আমদানিকারকেরা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর বুধবার পোর্ট নিউয়ার্ক কনটেইনার টার্মিনালকে পুরো
উদ্যোমে চালু থাকতে দেখা গেছে। একের পর এক জাহাজ থেকে কনটেইনার আনলোড করতে ক্রেনগুলো নিরলসভাবে চলেছে কেননা আমদানিকারক, খুচরো বিক্রেতা ও শিপাররা প্রস্তুত হচ্ছেন নতুন কঠোর শুল্কের জন্য যা পরবর্তী বিদেশি কার্গোতে আরোপিত হবে।
নিউ জার্সির ইউনিয়ন-ভিত্তিক একটি ছোট ট্রাকিং কোম্পানি ফ্যালকন মেসেঞ্জার সার্ভিস এর মালিক ড্যানি সানচেজ জানালেন, এটা যেন শান্তির আগে ঝড়ের মতো, সবাই এখন অপেক্ষার খেলায় আছে বলে অভিমত তার।
তিনি বলেন, বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হওয়ায় তাদের কাজের চাপ অনেক বেড়েছে, তবে তিনি আশঙ্কা করছেন এক-দুই মাসের মধ্যেই আমেরিকান ভোক্তাদের ওপর শুল্কের সম্পূর্ণ প্রভাব পড়া শুরু করলে কাজের পরিমাণ হঠাৎ অনেক কমে যাবে।
বুধবার ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য তার পারস্পরিক শুল্ক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করলেও, স্থানীয় আমদানিকারক ও শিপাররা এখনও দুশ্চিন্তায় আছেন আসন্ন ধাক্কার কারণে।
কুইন্সের জামাইকায় অবস্থিত জেডব্লিউ হ্যাম্পটন জুনিয়র অ্যান্ড কো : এর উদ্যােক্তারা বলছেন, প্রতিটি ব্যবসাই নিশ্চিততা চায়, কিন্তু এখন কোনো নিশ্চিততা নেই। শুল্ক বিরতিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন, তবে তারা বলছেন, কীভাবে সবকিছু পরিণত হবে, তা এখনো দেখা বাকি।
এদিকে, মেক্সিকো ছাড়া আমেরিকা চীন থেকে যেকোনো দেশ থেকে বেশি পণ্য কিনে । ২০২৪ সালে যার পরিমাণ প্রায় ৪৪০ বিলিয়ন ডলার। চীন থেকে আসে নানারকম ভোক্তা পণ্য যেমন ইলেকট্রনিকস (আইফোনসহ), খেলনা, পোশাক এবং জুতো।
নতুন শুল্ক থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব কর কমানোর কাজে ব্যবহার করা হলেও, আমেরিকায় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এবং এটা অবাক হওয়ার কিছু নয়, কারণ আমেরিকানদের সস্তা বিদেশি পণ্যের প্রতি চাহিদা খুবই বেশি। গত বছর বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার যার মধ্যে ২৯৫ বিলিয়ন ডলার কেবল চীনের সঙ্গে।
আমদানিকারকদের মতে, আমেরিকানরা অনেকটা নিজেরাই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। কারণ সব সময় সবচেয়ে সস্তা দাম চাই, সেটা অ্যামাজন হোক, ওয়ালমার্ট বা টার্গেট। তাই এটা অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল বলেও মনে করেন তারা। এখন যে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা এই মারাত্মক ভারসাম্যহীনতার ফল বলেও জানালেন তারা।
তবে ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির প্রভাব পড়বে কার্গো কোম্পানি ও কার্গো এয়ারলাইনগুলো, যেগুলো আমদানি কমে গেলে প্রথম ধাক্কা খাবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কারখানাগুলো সব পণ্য আটকে রেখেছে এবং এখনই পাঠাচ্ছে না, পরে হয়তো পাঠাবে, কিন্তু ততদিন তারা মার্কিন বাজারের জন্য উৎপাদন খুব একটা করছে না। যদি আগে থেকেই পণ্য মজুদ থাকে, তাহলে নতুন অর্ডার কে দেবে?
পরবর্তী ধাক্কা খাবে ট্রাকচালকেরা বলেও জানালেন তারা। বলেন, কম পণ্য আসা মানে তাদের ব্যবসাও কমে যাবে — আর তারা অনেক লোক নিয়োগ দিয়ে থাকে। তার সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো আমদানি হঠাৎ কমে গেলে আবার মহামারিকালের মতো ভাড়া নেমে যাওয়া।
তাতে ছোট কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ বড় প্রতিষ্ঠানগুলো আয় কমলেও পরিমাণে ব্যবসা করে কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে।