Connect with us

বিশেষ আয়োজন

মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরুষ্কার এবং অন্যান্য পুরুষ্কার আজ অনন্য অনুপ্রেরণা

মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরুষ্কার এবং অন্যান্য পুরুষ্কার আজ অনন্য অনুপ্রেরণা

মুক্তধারা আয়োজিত নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা আজ একটি পরিচিত নাম, একটি ভালোবাসা আর আস্থার জায়গা। প্রবাসে বাঙালির নিজ সাহিত্য ও ইতিহাসকে ধারণ করার এক অসামান্য আয়োজন আজ ৩৩ বছর ধরে উত্তরোত্তর পরিধি বৃদ্ধি করেই চলেছে।
যোগ হচ্ছে নতুন নতুন সংযোজন, নতুন নতুন পরিকল্পনা। তার মধ্যে অন্যতম হল একটি বাংলা সাহিত্য পুরুষ্কার, যেটি শুধু দুই বাংলাই নয় সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষার লেখকদের সম্মাননা দেবার অভিপ্রায়ে প্রতিষ্ঠিত। সেই পুরস্কারটির নাম ‘মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার’।
এই পুরুষ্কার আয়োজন করতে পেরে মুক্তধারা সম্মানিত বোধ করে। এ যাবৎ এই পুরুষ্কারের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়েছে অনেক সনামধন্য সাহিত্যিককে। এই পুরুষ্কারটির জন্য প্রতিবছরের আহ্বায়কের নেতৃত্বে একটি কমিটি তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ভোটের মাধ্যমে সেরা সাহিত্যিকদের নির্বাচন করে থাকে। বিষয় তিনটি হচ্ছে, ১. বাংলা সাহিত্যে বড় অবদান রেখে সাহিত্যোঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন, ২. মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেন এবং ৩. নিউ ইয়র্ক বইমেলাকে সমাদৃত করেছেন।
এই পুরুষ্কার প্রবর্তনের কারণে বাঙালি সাহিত্যিক মহলে ইতিমধ্যে নিউ ইয়র্ক বইমেলার প্রতি একটি বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে আমার ধারণা। বিশাল সাহিত্যসমুদ্রে এক ফোটা জলের মতন হলেও প্রবাসীদের মধ্যে বাংলা ভাষার গুণী সাহিত্যিকদের পরিচিতি তৈরি করতে এ উদ্যোগ অচিরেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এবং সেই সাথে একটি গর্বের জায়গা হয়ে উঠবে। ইতোপূর্বে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে বইমেলায় মুক্তধারা-চ্যানেল আই সাহিত্য পুরুষ্কার প্রচলিত হয়েছিল। তখন ২০১৬ সালে কবি নির্মলেন্দু গুণ এবং ২০১৭ সালে লেখক এবং বাংলা একাডেমি সভাপতি শামসুজ্জামান খান এই পুরুষ্কার পেয়েছিলেন।
মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরুষ্কার শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। এযাবৎ পুরস্কারটিতে যাঁরা ভূষিত হয়েছেন তাঁরা হলেন—২০১৮ সালে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ (ঢাকা), ২০১৯ সালে লেখক দিলারা হাশেম (যুক্তরাষ্ট্র), ২০২০ সালে লেখক সেলিনা হোসেন (ঢাকা), ২০২১ সালে সমরেশ মজুমদার (কলকাতা) , ২০২২ সালে গোলাম মুর্শিদ (যুক্তরাজ্য), ২০২৩ সালে কবি আসাদ চৌধুরী (কানাডা)।
এই পুরস্কারটি অনেকটা উন্মুক্ত এবং বই মেলার কমিটির সদস্যরাই যাচাই বাছাই করে প্রতি বছর এক জন সাহিত্যিককে পুরস্কারের জন্য নির্বচিত করেন।
এটি প্রবর্তন করেছেন গোলাম ফারুক ভূঁইয়া। যিনি নিজে একজন ব্যবসায়ী, বাংলা সাহিত্যানুরাগী। তিনি বাংলার ঐতিহ্যের প্রতি তাঁর অসামান্য মূল্যবোধ থেকে এগিয়ে এসেছেন এই পরিকল্পনাকে বাস্তনায়ন করতে। এর আর্থিক মূল্য সাড়ে তিন হাজার মার্কিন ডলার এবং সাথে একটি অতি নান্দনিক সম্মাননা প্ল্যাক।
আমাদের বিশ্বাস এই উদ্যোগ দিনে দিনে একটি অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হবে এবং অন্য প্রবাসীদেরকেও

শিল্প-সাহিত্য ক্ষেত্রে অনুরূপ অনুদান এবং সহায়তা করার অনুপ্রেরণা জাগাবে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতীয় পুরুষ্কারের মধ্যে নাগরিক খেতাবের ভিতরে সাহিত্য পুরুস্কার অন্যতম। তার মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, কিশোর সাহিত্যে অবদানের জন্য শিশু একাডেমি পুরুষ্কার রয়েছে। বহির্বিশ্বে বাংলা সাহিত্য চর্চাকে উৎসাহিত্য করার জন্য বাংলা একাডেমি প্রবর্তন করেছে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ পুরষ্কার। এর পাশাপাশি সাহিত্যের ক্ষেত্রে বেসরকারিভাবে বাংলাদেশে আরও কমপক্ষে ১৬টি পুরুষ্কার রয়েছে। বাংলা সাহিত্যে সম্মাননা দেবার জন্য পশ্চিম বঙ্গে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারসহ আনুমানিক আরও প্রায় ১৯টি পুরুষ্কার রয়েছে।
যেহেতু বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য পুরুষ্কারের জন্য আলাদা বিশেষ নীতিমালা রয়েছে, তাই তার পরিসরের সীমাবদ্ধতা থাকা স্বাভাবিক। বাংলা একাডেমি যেমন শুধু বাংলাদেশিদের পুরুস্কার দিতে পারেন এবং কলকাতার সাহিত্য পুরুষ্কারেরও নিশ্চই তেমনি নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস সব বাঙালির জন্য উন্মুক্ত এই মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরুস্কার একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠবে।
এর বাইরে লেখকদের পাশাপাশি প্রকাশকদের উৎসাহিত করতে মুক্তধারা আয়োজিত নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা প্রবর্তন করেছে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরষ্কার’। যেটি বই মেলায় উপস্থিত প্রকাশকদের স্টলগুলি পরিদর্শন করে নির্বাচন করা হয়। যে সকল প্রকাশক নিজ খরচে ঢাকা বা কলকাতা থেকে অনেক বই নিয়ে এসে সারাদিন প্রদর্শন করেন, তাদের অনেকেরই বিক্রি প্রায় সময়ই আশানুরূপ হয়না। তবু নিজেদের লোকসান হলেও তারা তাদের আবেগ, বইয়ের জন্য ভালোবাসা ও তার প্রসারের জন্য সংকল্প থেকেই এ মেলায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। ব্যবসার বাইরে তাদের এই অবদান আর অনুভূতিকে আন্তরিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তাই নিউ ইয়র্ক বইমেলায় প্রকাশক, লেখক আর আয়োজনকারীদের মধ্যে একটি বন্ধুত্ব ও প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এই পুরুষ্কারের অর্থমান এক হাজার মার্কিন ডলার এবং গত বছর এটির স্পন্সর করেছেন সাহিত্যানুরাগী ক্যান্সার চিকিৎসক নর্থ ক্যারোলিনার ডাঃ মালেকা আহমেদ।
নিউইয়র্ক মুক্তধারা বইমেলা আরেকটি পুরুষ্কার প্রবর্তন করেছে। সেটি হচ্ছে ‘শহীদ কাদরী স্মৃতি সাহিত্য পুরষ্কার’। এটি শুধুমাত্র প্রবাসী লেখকদের জন্য এবং আগের বছরের প্রকাশিত বই থেকে বিবেচিত হয়ে থাকে। এই পুরুষ্কারটি ইতিমধ্যে প্রবাসী লেখকদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছে। সেই সাথে আমাদের প্রাণের কবি শহীদ কাদরীর স্মৃতিকে ধারণ করার প্রয়াস পেয়েছে। নিউইয়র্ক মুক্তধারা বইমেলার পরিধি দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। মেলাটি আজ আন্তর্জাতিক বইমেলা নামে অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকাস্থ বাংলা একাডেমির সহায়তা এবং অন্যান্য সংগঠনের তহবিলের মত মুক্তধারা বইমেলার জন্য বড় আর্থিক সহায়তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে বহু বছর ধরে বইমেলাকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আমেরিকাতে বহু পেশার, বহু সাহিত্য দরদী যে মানুষেরা এটাকে ধরে রেখেছেন, তাদেরকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের মধ্যে বড় অনুদান দিয়ে অধ্যক্ষ হোসনে আরা ফাউন্ডেশন (ডাঃ জিয়াউদ্দিন এবং ডাঃ ফাতেমা আহমেদ), গোলাম ফারুক ভূঁইয়া ফাউন্ডেশন, সৈয়দ জাকি এবং রাহাত হুসেইন, এলিওআই ফার্মাসিউটিকাল ফ্লোরিডা (রোজি সুলতানা), অ্যাডভান্স ফার্মাসিউটিক্যাল নিউ ইউর্ক (লিয়াকত হোসাইন), বাংলাদেশ থেকে ফরিদুর রেজা সাগর (চ্যানেল আই), শাহ সারওয়ার (আইএফসি ব্যাংক) অবদান রেখে চলেছেন। এই স্বতঃস্ফুর্ত সহায়তা মুক্তধারা বইমেলার সন্মান বৃদ্ধি করেছে এবং যে কোন দলীয় বা রাজনৈতিক চাপ থেকে একে মুক্ত রাখতে পেরেছে।

লেখক: সংগঠক, অধ্যাপক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, নজরুল গবেষক এবং নিউ ইয়র্ক মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending