Connect with us

সারা বিশ্ব

জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ৪ বছর পরেও পুলিশ আইন সংস্কারে ধীরগতি

Published

on

২০২০ সালে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর জাতিগত ন্যায়বিচারের প্রতিবাদ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে অ্যামেরিকান পুলিশের আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক আইনগত সংস্কারের আশা করা হয়। প্রাথমিকভাবে এরকম একটি আইন বিল আকারে খসড়া করা হলেও চার বছরে এটি কংগ্রেসে বারবার বাধার সম্মুখীন হয়েছে এবং এখনও এগিয়ে যেতে পারেনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ২০২১ সালে জর্জ ফ্লয়েড জাস্টিস ইন পুলিশিং অ্যাক্ট নামে আক্রমণাত্মক আইন প্রয়োগের কৌশল, অসদাচরণ এবং জাতিগত পক্ষপাত বন্ধ করার জন্য একটি খসড়া বিল তৈরি করা হয়।

প্রাথমিকভাবে কংগ্রেসে ওই পুলিশ সংস্কারের খসড়া বিলটি দ্বিদলীয় চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা সে বছরেই ব্যর্থ হয়। ব্যর্থতার জন্য বাইডেন প্রশাসন রিপাবলিকানদের দায়ী করে।

পুলিশ অফিসারদের কিছু অতিরিক্ত মামলা থেকে রক্ষার জন্য দায়মুক্তি ধারা সংযুক্ত চেয়ে ওই সময় আইন প্রণেতারা খসড়া বিলটিকে বাধা দেন।

যদিও ডেমোক্র্যাট সদস্য শিলা জ্যাকসন লি বৃহস্পতিবার খসড়া বিলটি কংগ্রেসে আবারও উত্থাপন করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংস্কারের প্রচেষ্টাগুলো ২০২০ সালের নির্বাচনের সময় গুরুত্বপূর্ণ থাকলেও চলতি বছরের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুলিশিং একটি শীর্ষ ইস্যু হওয়ার সম্ভাবনা কম।

ইয়েল ল স্কুলের জাস্টিস কোলাবরেটরির নীতি পরিচালক জর্জ কামাচো বলেন, ‘অন্য সমস্যাগুলো এখন সামনে চলে এসেছে, বিশেষ করে ইযরায়েল ও হামাসের সংঘাত, ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং অর্থনীতির বিষয়।’

তবে কামাচো বলেছেন, ‘বাইডেনের কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে সমর্থন কম থাকায় এটি আলোর মুখ দেখতে পারে, কারণ কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়গুলো পুলিশের বিষয়ে পদক্ষেপ দেখতে চায়।’

অলাভজনক পোলিং ফার্ম আফ্রিকান অ্যামেরিকান রিসার্চ কোলাবোরেটিভের এক সাম্প্রতিক পোলিং ডেটায় দেখা যায়, কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় এখন জীবনযাত্রার সংকট এবং চাকরির মতো অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে৷

এ বিষয়ে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘আমি কংগ্রেসকে জর্জ ফ্লয়েড জাস্টিস ইন পুলিসিং অ্যাক্ট, যা আইন প্রয়োগকারীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে; আমার ডেস্কে পাঠানোর জন্য অনুরোধ অব্যাহত রাখব।’

রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার ক্যাম্পেইনের একজন মুখপাত্র জানান, ট্রাম্প অভিবাসন এবং সহিংস অপরাধের বিষয়ে কঠোর পন্থা অবলম্বন করবেন।

তিনি বলেছেন, ‘ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পুনরায় স্থিতিশীল করবেন।’

ফ্লয়েডের চতুর্থ মৃত্যু বার্ষিকীর এক দিন আগে প্রবীণ নাগরিক অধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট রেভারেন্ড আল শার্প্টন জর্জ ফ্লয়েড জাস্টিস ইন পুলিশিং অ্যাক্ট বিলটি পাস করার জন্য কংগ্রেসকে আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘জর্জ ফ্লয়েড জাস্টিস ইন পুলিসিং অ্যাক্ট এমন একটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে যা আমরা চার বছর আগে পুলিশের হাতে নিহত একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ, তার পরিবার বা প্রতিটি পরিবারকে দিয়েছিলাম। এটি পাস হলে আমাদের কয়েক দশক ধরে মিছিল, প্রতিবাদ এবং ওকালতি সফল হবে।’

কংগ্রেস জর্জ ফ্লয়েড আইন পাস করতে ব্যর্থ হওয়ার পর বাইডেন ২০২২ সালের মে মাসে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যার ফলে আংশিকভাবে একটি নতুন করে পুলিশের ‘অসদাচরণ’ ডাটাবেস তৈরি করা সম্ভব হবে।

পুলিশ সংস্কারের ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসন যে বৃহত্তম পরিবর্তনগুলো করেছে তার মধ্যে এটি একটি।

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো রাশাওন রে বলেছেন, ‘এর মাধ্যমে ট্রাম্প যুগের একটি নীতি প্রত্যাহার করা হয়েছে যা পুলিশের সহিংসতা কিছুটা হ্রাস করেছে।’

অ্যামেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের সিনিয়র পলিসি কাউন্সিল নিনা প্যাটেল বলেন, ‘পুলিসের জবাবদিহিতার বিষয়ে কিছু জিনিস অর্জন হয়েছে। কিন্তু আমরা যা চেয়েছি তার থেকে সেগুলো অনেক কম।’

তিনি আরও বলেন, ‘লুইযিয়ানা, অ্যারিযোনা ও জর্জিয়ার মতো স্টেইটগুলোর নীতি পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করে তুলছে, ফুটেজগুলোতে প্রায়ই নৃশংসতার ঘটনা সামনে নিয়ে আসে।’

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের বোর্ড চেয়ারওম্যান সিকলি গে বলেছেন, ‘আমাদের অবস্থান হলো এ সংস্কার যথেষ্ট নয়, ক্রমবর্ধমান সংস্কারও অপর্যাপ্ত। আমরা অনেক পরিবারের কাছ থেকে সরাসরি শুনেছি যে তাদের নির্মম অভিজ্ঞতা কথা। কিন্তু আইন সংস্কার ও নীতি পরিবর্তনের বিষয়ে অগ্রগতির অভাব রয়েছে।’

২০১৮ সালের মার্চ মাসে স্যাক্রামেন্টো পুলিশ স্টিভান্তে ক্লার্কের দাদার বাড়ির পেছনের উঠোনে তার ভাইকে ২০টি গুলি করার পর হত্যা করে।

নিহতের কাছে বন্দুক ছিল বলে পুলিশ জানালেও তার কাছে শুধু একটি মোবাইল ছাড়া কিছু পাওয়া যায়নি।

দুই বছর পর ফ্লয়েডের হত্যা আলোড়ন তৈরি করলে ক্লার্ক ভেবেছিলেন শেষ পর্যন্ত পুলিশের ব্যবস্থায় সংস্কার আসবে যা তিনি এবং অন্যরা বছরের পর বছর ধরে চেয়েছেন।

ক্লার্ক বলেছেন, ‘জর্জ ফ্লয়েডের মতো ঘটনা রোধ করার জন্য ব্যাপক নীতি এবং আইনি পরিবর্তন না করে আপনি ফ্লয়েডের জীবন ও উত্তরাধিকারকে সম্মান করতে পারবেন না। আমি মনে করি না যে বাইডেন প্রশাসন এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে।’

তিনি বলেন, ‘ এটি কেবল কৃষাঙ্গদের লড়াই নয়। এটি সবার লড়াই। পুলিশের আচরণ পরিবর্তনের জন্য প্রাথমিক আহ্বান সত্ত্বেও, পরবর্তী সংস্কারে ফেডারেল প্রচেষ্টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে।’

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending