ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে উগ্র ডানপন্থি দলগুলো অবিশ্বাস্য সাফল্য পেয়েছে। এটি ইউরোপের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথে অনিশ্চয়তা যোগ করেছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে অভিবাসীদের মধ্যে। অঞ্চলটিতে ডানপন্থিদের অবস্থান জোরালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও বিধিনিষেধমূলক নীতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। খবর ডয়চে ভেলের।
৭২০ আসনের এই পার্লামেন্টে মধ্যপন্থি, উদার ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলো মিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে যাচ্ছে। তবে ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়ার নেতাদের জন্য এই নির্বাচনের ফল একটা বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। ফ্রান্সে জাতীয়তাবাদী ও ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) ভোটে এমন আধিপত্য দেখিয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ অবিলম্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। আরএন ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছে, যা মাখোঁর মধ্যপন্থি জোটের দ্বিগুণ। এ অবস্থায় ইউরোপের অনেকেই উদ্বিগ্ন যে, ফ্রান্সে উগ্র ডানপন্থি মেরিন লে পেনের দল আরএন ক্ষমতায় আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে অভিবাসীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
পাকিস্তানি রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের জ্যেষ্ঠ সদস্য রাজা আলী আসগর ৩৫ বছর আগে পাকিস্তান থেকে প্রথম প্যারিসে আসেন। তিনি বলেন, ডানপন্থি দলগুলো সবসময়ই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। ডানপন্থিরা সরকারে এলে অভিবাসীদের সমস্যা বাড়বে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, অভিবাসীরা কর্মসংস্থান খুঁজতে এবং সামাজিক সুবিধা পেতে নানা সমস্যায় পড়বে। ২৪ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সে যাওয়া সেতার আলী সুমন প্যারিসে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, সবাই জানে যে, কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো অভিবাসীদের, বিশেষ করে মুসলমানদের পছন্দ করে না। ফ্রান্সের অভিবাসীরা আগামী দিনগুলো নিয়ে আতঙ্কিত। এ নিয়ে ফরাসি লেখক এমিলিয়া রোইগ ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, এত ভণিতা না করে স্বীকার করুন যে, ফ্যাসিবাদ এসেছে। অস্বীকার করা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে।
বছরের শেষ দিকে অস্ট্রিয়ায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ডানপন্থি পপুলিস্ট ফ্রিডম পার্টি অব অস্ট্রিয়া (এফপিও) ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ভোটে শীর্ষে রয়েছে। ইতালিতে প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির অতি-ডান ব্রাদার্স অব ইতালি পার্টিও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়ী হয়েছে।
জার্মানিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ডানপন্থি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) মতো দল যত ভোট পেয়েছে, তা আর কোনো দল পায়নি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এএফডিকে ‘সন্দেহজনক চরমপন্থি’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব মুসলিমের সেক্রেটারি জেনারেল আইমান মাজেক বলেন, এটি শুধু অভিবাসী নয়, সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্রের জন্য সমস্যা। আমার মনে হয়, আমাদের গণতান্ত্রিক দলগুলোর কিছু অংশ এখনও বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেনি। এদিকে, পুঁজিবাজারে ফরাসি সরকারি বন্ডের বড় পতনের পর ইমানুয়েল মাখোঁ পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ একজন সহযোগী বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, মাখোঁ পদত্যাগ নিয়ে ভাবছেন না। নতুন নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অর্থনীতি ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীনতায় ভুগছেন।
২০১৬ সালের জুনে জাতীয়তাবাদীদের বিদ্রোহে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার (ব্রেক্সিট) কয়েক মাস পর যুক্তরাষ্ট্রে জয়ী হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারও ইউরোপে ডানপন্থিদের উত্থান কি ট্রাম্প জয়ের ইঙ্গিত? ইউরোপের উগ্র ডানপন্থিদের অনেকেই ট্রাম্পের মতো জাতীয়তাবাদ, অভিবাসীদের প্রতি শত্রুতা ও বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি ঘৃণা পোষণ করেন। অনেকেই ভাবছেন, এ হাওয়া যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ব্যবস্থা ইউরোপের চেয়ে আলাদা। তার পরও জো বাইডেনের সতর্ক হওয়া উচিত বলে ভাষ্য বিশ্লেষকদের।