সারা বিশ্ব
মধ্যপ্রাচ্যে আবার বেজে উঠলো যুদ্ধের দামামা
Published
1 month agoon
দীর্ঘদিন যাবৎ ইরান ও ইসরাইলকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি বিরাজ করছিল। সেই ঝুঁকি রীতিমতো হুমকিতে পরিণত হয়েছে। ইসরাইলে মঙ্গলবার রাতে ইরানের ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং তাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি হুমকিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা এখন চরম পর্যায়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাওয়া ইসরাইল এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। অন্যদিকে ইরান বলেছে, ইসরাইল জবাব দিলে এর পাল্টা জবাব হবে আরও ভয়াবহ। ইরানের নিক্ষেপ করা কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের বিমানবাহিনীর ঘাঁটিগুলোর ভেতরে আঘাত হেনেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরদিন ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এসব তথ্য জানিয়েছে। তবে কোন কোন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে, তা স্পষ্ট করেনি ইসরাইল।গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করা হচ্ছে। ইন্টারনেটে ইসরায়েলিদের পোস্ট করা বিভিন্ন ছবিতে দেশটির মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জায়গায় গভীর গর্ত হতে দেখা গেছে। ইরানের দাবি, গাজা উপত্যকায় ও লেবাননে ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞের প্রতিশোধ এবং হামাস, হিজবুল্লাহ ও আইআরজিসি’র নেতাদের গুপ্তহত্যার জবাবে তারা ইসরাইলে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের হামলাকে ‘অকার্যকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ‘ইরান মঙ্গলবার রাতে একটি বড় ভুল করেছে- এর জন্য তারা মাশুল দেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরাইল পাল্টা প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত না নিলে তাদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরান। কিন্তু তেলআবিব যদি পাল্টা হামলা চালায় তাহলে তার জবাব আরও কড়াভাবে দিতে প্রস্তুত তেহরান।
এমনিতেই গাজায় এ শতাব্দীর সবচেয়ে নৃশংসতম হামলা চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে ইসরাইল। তাতে বিবেকসম্পন্ন মানুষসহ মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। তার ওপর পাশের দেশ লেবাননে হিজবুল্লাহ’র বিরুদ্ধে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু করেছে ইসরাইল। সেখানেও তারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বেসামরিক এলাকায় ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে। এতে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। এর ওপর স্থল হামলা শুরু করেছে। ফলে এই উত্তেজনা আকস্মিকভাবে দাবানলের মতো গ্রাস করতে পারে মধ্যপ্রাচ্যকে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এখান থেকে শুরু হয়ে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ক্ষোভে ফুঁসছে ইয়েমেনের হুতিরা। ইরাকের রয়েছে কড়া বার্তা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান সাবধান করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে ইসরাইলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরাইল। তাকে সেখানে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাটজ জাতিসংঘ মহাসচিবকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, জাতিসংঘের ইতিহাসে তিনি কলঙ্কিত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাকে তিনি ইসরাইলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছেন। তাদের দেশে তার প্রবেশ নিষিদ্ধ। যেকোনো ব্যক্তি, যারা ইরানের হায়েনার মতো হামলায় দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানাবে না, তারা ইসরাইলের মাটিতে পা রাখার অধিকার রাখতে পারেন না। মধ্যপ্রাচ্যের এ পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলেছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ বলেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক। যা ঘটছে তার প্রেক্ষিতে তারা সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানায়। এ নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রাশিয়া। যেসব হামলায় বেসামরিক মানুষ নিহত হন, তার নিন্দা জানিয়েছে তারা। ওদিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন ইসরাইলের সাবেক দু’জন প্রধানমন্ত্রী। তারা হলেন- নাফতালি বেনেট এবং ইয়াইর লাপিদ। এর মধ্যে ইয়াইর লাপিদ সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন, গাজা ও ইরানকে সন্ত্রাসীদের আস্তানা বলে অভিহিত করেন।