সারা বিশ্ব
এশিয়ার প্রথম নারী হিসেবে সাহিত্যে নোবেল জয় করলেন হান ক্যাং
Published
4 weeks agoon
এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয় করলেন প্রখ্যাত দক্ষিণ কোরিয়ান লেখিকা হান ক্যাং। এশিয়ায় প্রথম নারী হিসেবে এ স্বিকৃতি অর্জন করলেন তিনি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টার পর তার নাম ঘোষণা করা হয়। এবার সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১২১তম লেখক হিসেবে ৫৩ বছর বয়সী হানের নাম ঘোষণা করেছে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি। পুরস্কার ঘোষণার সঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তার দারুণ কাব্যময় গদ্যের কথা—যা ঐতিহাসিক আঘাত আর ক্ষতগুলোকে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরে এবং মানব জীবনের নশ্বরতাকে প্রকাশ করে বলে মত ব্যক্ত করা হয়েছে একাডেমির পক্ষ থেকে। যে বিশেষত্বের চিহ্ন পাওয়া যায় তার প্রায় সবগুলো উপন্যাসে।
পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার পাবেন হান। গত বছর এ সম্মাননা পেয়েছিলেন নরওয়ের লেখক, নাট্যকার ও কবি ইয়ন ফোসে।
গতকাল পুরস্কার ঘোষণার পরপরই সুইডিশ একাডেমির স্থায়ী সচিব ম্যাটস্ মাম নোবেলজয়ী লেখিকাকে ফোনে পেয়ে যান। ছেলের সাথে হান ক্যাং তখন রাতের খাবার খচ্ছিলেন। সত্যি তিনি এ সংবাদের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তবু, ম্যাটস্মাম পুরস্কার জয়ের সুখবরটি দিয়ে তাকে আগামী ডিসেম্বরের জন্য প্রস্তুত হবার কথা বলেন। কারণ ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুইডেনের স্টকহোমে এবারের বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নোবেল পুরস্কার। এর কিছু সময় পরেই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল হান ক্যাংকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট করেন। তিনি বলেন, এটি কোরিয়ান সাহিত্যের জন্য একটি বড় অর্জন।
সুইডিশ একাডেমির সদস্য সাহিত্যিক অধ্যাপক অ্যান্ডার্স ওলসন বলেন, ‘হ্যান ক্যাংয়ের সাহিত্যে বিশেষকরে নারী এবং জীবনের দুর্বলতার প্রতি সহানুভূতি দেখা যায়। দেহ এবং আত্মার মধ্যে আন্তসম্পর্কের স্বতন্ত্র একটা সচেতনতা কাজ করে তার লেখায়।’
হান ক্যাং ১৯৭০ সালের ২৭ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৯ বছর বয়সে পরিবারসহ সিউলে চলে যান। তিনি একটি সাহিত্যিক পরিবার থেকে এসেছেন। তার বাবা হান সিউং-উয়ন দক্ষিণ কোরিয়ার একজন স্বনামধন্য ঔপন্যাসিক। কথাশিল্পী বাবার সাহচর্যে বেড়ে ওঠা হান কাং লেখালেখির পাশাপাশি শিল্প ও সঙ্গীতের প্রতিও গভীরভাবে আকৃষ্ট, যা তার সমস্ত সাহিত্যিক কাজেও প্রতিফলিত হয়েছে।
১৯৯৩ সালে প্রথমে কবিতা দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন হান ক্যাং, যা ‘লিটারেচার অ্যান্ড সোসাইটি’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে তার প্রথম গদ্যসংকলন ‘লাভ অব ইয়োসু’ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তিনি একের পর এক উপন্যাস ও ছোটগল্প প্রকাশ করেন। তার উল্লেখযোগ্য একটি উপন্যাস হলো ২০০২ সালে প্রকাশিত ‘ইউর কোল্ড হ্যান্ডস’। সেখানে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও ব্যক্তিত্বের মধ্যে দ্বন্দ্বের চিত্র ফুটে উঠেছে।
হান কাংয়ের প্রথম আন্তর্জাতিক সাফল্য আসে ২০০৭ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’-এর মাধ্যমে, যা তিনটি অংশে লেখা। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ইয়ং-হাই যখন খাদ্যাভ্যাসের সামাজিক নিয়ম মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন এর সহিংস পরিণতির কাহিনি তুলে ধরা হয়। এ উপন্যাসের মাধ্যমেই তিনি ২০২৬ সালের ম্যন বুকার পুরস্কার লাভ করেন। এটিই তার প্রথম ইংরেজিতে অনুদিত বই, যা ঠিক আগের বছর ডেবোরাহ্ স্মিথ অনুবাদ করেছিলেন। পরের বছরেই যার মাধ্যমে রাতারাতি আন্তর্জাতিক পরিসরে চলে আসেন হান ক্যাং।
হান ক্যাংয়ের সাহিত্যিক কাজগুলোতে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা গভীরভাবে একিভুত হতে দেখা যায়—যা প্রাচ্য দর্শনের সঙ্গে সম্পর্কিত। তার প্রতিটি রচনায় তিনি মানব জীবনের ভঙ্গুরতাকে প্রকাশ করেন, যেখানে দেহ ও আত্মা, জীবিত ও মৃতের মধ্যকার সম্পর্ক লেখিকার কাব্যিক গদ্যের অনন্যতায় প্রতাশিত। তার কাব্যময় ও পরীক্ষামূলক লেখার শৈলীতে তিনি ইতিমধ্যেই আধুনিক গদ্যের একজন অগ্রগামী শিল্পী হিসেবে আলোচিত হয়েছেন।
হান ক্যাংয়ের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বইগুলোর হলো—ডোন্ট সে গুডবাই, আ বয় ইজ কামিং, আই পুট ডিনার ইন দ্য ড্রয়ার, ইয়েলো প্যাটার্ন এটার্নিটি, গ্রিক লেসনস, টিয়ার বক্স, মাই নেইম ইজ সান ফ্লাওয়ার, হিউম্যান অ্যাক্টস, দ্য হোয়াইট বুক।