Connect with us

সারা বিশ্ব

আমেরিকার পর কানাডাকে নিয়ে বিপদে মোদি

Published

on

মোদি

কানাডা ১৪ অক্টোবর ভারত সরকারকে হত্যা ও ছিনতাইয়ের দায়ে অভিযুক্ত করেছে। কানাডায় বসবাসকারী ভারতের সমালোচকদের চুপ করার উদ্দেশ্যে ভারত সরকার এটি করেছে বলেছে অভিযোগ। গত বছর একজন শিখ ধর্মাবলম্বীকে হত্যার মাধ্যমে শুরু হওয়া তিক্ততা ক্রমে বেড়ে চলেছে।
কানাডা ভারতের শীর্ষ কূটনীতিক এবং আরও পাঁচজনকে বহিষ্কার করেছে। দেশটির অভিযোগ, তারা একটি বিশাল অপরাধী নেটওয়ার্কের অংশ। ভারত পাল্টা জবাব হিসেবে, ছয় কানাডিয়ান কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। কানাডায় একজন বিশিষ্ট শিখ ধর্মগুরু হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডের পর দুই দেশের মধ্যে বিরোধ তীব্র আকার ধারন করে। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকার তখন বলেছিল, এই হত্যাকাণ্ড ভারত সরকার ঘটিয়েছে। ভারতের বাইরে কানাডা শিখ সম্প্রদায়ের বড় আবাসস্থল। ভারতে তাদের বেশির ভাগই বাস করে পাঞ্জাব রাজ্যে। ভারত সরকার বলেছে যে, কানাডায় কিছু শিখ সক্রিয়ভাবে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে জড়িত, যারা ভারত ভেঙে খালিস্তান নামে শিখদের একটি আবাসভূমি তৈরি করতে চায়। কানাডার কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের তদন্ত কানাডিয়ান শিখ অ্যাকটিভিস্টদের লক্ষ্য করে চলা প্রচারাভিযানে ভারত সরকারের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে দৃষ্টি নিবদ্ধ। দুই দেশের সম্পর্কের ভাঙন এখন একেবারে শীর্ষে চলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেছিলেন, গত সপ্তাহে তদন্তের বিষয়ে তিনি লাওসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখোমুখি হয়েছিলেন। উভয় নেতাই একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে লাওস গিয়েছিলেন। ট্রুডো বলেন, তিনি সিঙ্গাপুরে উভয় দেশের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের আগে মোদির কাছে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। কথা ছিল, কর্মকর্তারা ভারতীয় কূটনীতিকদের সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোচনা করবেন, যা ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কানাডায় শিখদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধমূলক কার্যকলাপ বলে বর্ণনা করছে। ট্রুডো বলেন, ‘আমি তাকে বোঝাতে পেরেছি যে, এটি খুব, খুব গুরুত্ব সহকারে নেওয়া দরকার।’ দুই দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে একের পর এক আলোচনা সত্ত্বেও, সিঙ্গাপুর বৈঠক কানাডিয়ান কর্মকর্তারা যে সহযোগিতা চেয়েছিল তা পাননি। যার ফলে কূটনৈতিক বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, ‘কানাডার মাটিতে কানাডিয় নাগরিকদের হুমকি এবং হত্যা করার জন্য একটি বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমরা কখনই সহ্য করব না। এটি কানাডার সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।’
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভারত সরকার তাদের কূটনৈতিক রক্ষাকবচ তুলে নিতে এবং কানাডার তদন্তে অংশ নেওয়ার অনুমতি দিতে অস্বীকার করায় ভারতের ছয় কূটনীতিককে বহিষ্কারের আদেশ জারি করা হয়। বহিষ্কৃতদের মধ্যে ছিলেন কানাডায় ভারতের হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কানাডার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ছয়জনকে নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই ব্যক্তিদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটি গভীরভাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, তদন্তকারীরা নিজ্জার হত্যার ব্যাপারে প্রচুর, সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন।
নিজ্জারকে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারেতে একটি শিখ গুরদুয়ারার বাইরে তিনজন মুখোশধারী ব্যক্তি অতর্কিত হামলা করে হত্যা করে। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত তিন ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারত সরকার অবশ্য ভারতীয় কূটনীতিকদের সাথে কানাডা যা করেছে তার সবই অস্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগকে তারা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনা করেছে। এতে বলা হয়েছে যে, ট্রুডো কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে মিশে আছেন। কারণ তারা তার লিবারেল পার্টিকে সমর্থন করেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবেশি দেশগুলোর ভেতরে বিরোধীদের হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ভারতের বিরুদ্ধে কানাডার অভিযোগগুলো যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক শিখ ধর্মগুরু পান্নুনের মতোই। যদিও পান্নুন হত্যার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রেরও প্রমাণ আমেরিকানদের তদন্তে শক্তিশালী হয়েছে। গত নভেম্বরে,ম্যানহাটনের আদালতের ফেডারেল প্রসিকিউটররা বলেছিলেন, তারা কানাডার নিজ্জার হত্যা ও আমেরিকার পান্নুন হত্যাচেষ্টার মধ্যে সংযোগ খুঁজে পেয়েছেন। আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডার অন্য মিত্ররা চীনের প্রতি পাল্টা শক্তি হিসেবে ভারতকে বিবেচনা করছে। এ সময় ভারত ও কানাডার মধ্যে গভীর বিভেদ দেখা দেয়। প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও অর্থনীতি উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্ব মঞ্চে ভারত একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেছেন, তিনি তার দেশের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সাথে হালনাগাদ গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কে অবহিত করেছেন। কানাডার সাথে আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড মিলে ফাইভ আইস গোয়েন্দা সহযোগিতা গ্রুপ তৈরি করেছে।

Advertisement
Comments
Advertisement

Trending