গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক খ্যাত আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান তার বোন শেখ রেহানা সমেত। এরপরপরই জীবনের ভয়ে, হামলা-মামলার ভয়ে ভারতে পালিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের কয়েক শত শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-কমী। বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান ডক্টর ইউনূস এরই মধ্যে ভারত সরকারের সাথে পলাতক শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে নিতে দেনদরবার চালিয়ে গেলেও, এখন পর্যন্ত তা বৃথা। এ অবস্থায়, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফর আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক বলে ভাবা হচ্ছিলো। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাতের সময়কে
কেন্দ্র করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে ভুলে নি যুক্তরাস্ট্র আওয়ামী লীগের নেতারা। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নিউইয়র্ক থেকে বাসযোগে ওয়াশিংটন যান। হোয়াইট হাউজের সামনে সভা-সমাবেশ করার লক্ষ্য নিয়ে। শেষমেষ তা অনুষ্ঠিতও হয়। কিন্তু গোল বাধে যখন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। স্লোগানের ভাষা ছিল—ওয়েল কাম ওয়েল কাম মোদিজি, মোদিজি, উই সাপোর্ট-মোদিজি মোদিজি ইত্যাদি।
সিদ্দিকুর রহমানের এ স্লোগান এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন আলোচনার ঝড় তুলেছে। নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন কমিউনিটিতেও চলছে তর্ক-বির্তক। বেশিরভাগ প্রবাসী প্রশ্ন তুলছেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি মোদিকে কেন স্লোগান দেবেন? অনেকেই প্রশ্ন করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কি ভারতের বিজেপির শাখায় পরিণত হয়েছে? মোদি কী আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতায় অভির্ভূত হয়েছেন? শেখ হাসিনাকে বাঁচানোর জন্য এতো নিচে নামতে হলো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে? যে উদ্দেশ্যে এসব স্লোগান দেওয়া হয়েছে, তা হিতে বিপরীত হয়েছে?
এ ব্যাপারে অবশ্য এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন। তার এ কথাও বিতর্ক শুরু হয়েছে। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা যখন প্রতিবাদ সমাবেশ করছিলাম, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেখতে পাই। তাই আমরা তাকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিই। তারা আমার নেত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের স্থান দিয়েছে। তাই স্লোগান দিই। এটাতে তো আমি দোষের কিছু দেখি না। আমাকে যখন দেশদ্রোহী বলা হয়, তখন আমি বলেছিলাম, আমি বাংলাদেশি নই। এমনকি আমি ডুয়েল সিটিজেনও নই। আমি সত্য কথা বলেছি। আর আমি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নই। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শাখা নয়। তাহলে শেখ হাসিনা কীভাবে কমিটি দেন। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বলিনি, অন্য কেউ বলতে পারে।
এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বলছেন, ড. সিদ্দিকুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করেছেন। কোনোভাবেই তিনি মোদিকে স্বাগত জানাতে পারেন না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মোদি কী বাংলাদেশের নাগরিক? তা না হলে একজন বাংলাদেশি হয়ে তিনি কীভাবে মোদিকে স্বাগত জানান। তিনি প্রমাণ করেছেন, আওয়ামী লীগ সব সময় ভারতের দালাল। অথবা আওয়ামী লীগ বিজেপির বাংলাদেশ বা যুক্তরাষ্ট্র শাখায় পরিণত হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কী ড. সিদ্দিকুর রহমানের মতো নেতাদের দেশপ্রেম নেই। তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে, ভারতের পক্ষের শক্তি।